ফ্লোরিডার ইন্ডিয়ান রিভার লেগুনে পথ হারিয়ে পাড়ে এসে আটকে পড়া ২০টি কমন বটলনোজ ডলফিনের ওপর করা এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা এতে এক চমকপ্রদ কিন্তু উদ্বেগজনক তথ্য পেয়েছেন। ডলফিনের মস্তিষ্কে পাওয়া গেছে মানুষের আলঝেইমার রোগের মতো স্নায়বিক ক্ষতির চিহ্ন। গবেষকরা ধারণা করছেন, মস্তিষ্কের এই ক্ষতিই হয়তো ডলফিনদের পথ চেনার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় যার ফলে তারা তীরে এসে আটকে পড়ে।
এই গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, বিজ্ঞানীরা ডলফিনের মস্তিষ্কের এই ক্ষয়কে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। উষ্ণ জলের পানির বিষাক্ত শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আরও ঘন ঘন বিস্তৃত হচ্ছে।
আলঝেইমারের অনুরূপ ক্ষতি। ডলফিনগুলির মস্তিষ্কের বিশ্লেষণে মানুষের আলঝেইমারের সাথে যুক্ত জিনের মিল পাওয়া গেছে। তবে, শৈবালের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ব্লুমের সময় ডলফিনগুলির মস্তিষ্কে ২.৪ ডায়ামিনোবিউটারিক অ্যাসিড নামক নিউরোটক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থের ঘনত্ব ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯০০ গুণ বেশি! এই নিউরোটক্সিন ক্ষতিকারক সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে আসে।
এই অতিরিক্ত বিষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে ক্ষতিকারক শৈবাল ব্লুমের ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থ ডলফিনদের পথ চেনার এবং স্মৃতিশক্তির ক্ষতি ঘটাতে পারে, যা তাদের পথভ্রান্ত হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিয়ামির টক্সিকোলোজিস্ট ডেভিড ডেভিস জানিয়েছেন, ডলফিনদেরকে সামুদ্রিক পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থের পরিবেশগত সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই সায়ানোব্যাকটেরিয়াল ব্লুমের সঙ্গে সম্পর্কিত এই সমস্যাগুলি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও উদ্বেগের কারণ।
সাধারণভাবে, ডলফিনরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আলঝেইমার্সের মতো মস্তিষ্কের সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু গবেষকদের অনুমান, ক্ষতিকারক শৈবাল ব্লুম এই সমস্যাগুলিকে ত্বরান্বিত করে। পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলছে।
খাদ্যশৃঙ্খলে ঝুঁকি এই শৈবাল ব্লুম শুধু ডলফিন নয় অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীরও ক্ষতি করছে। আর এই ক্ষতি খাদ্যশৃঙ্খল ধরে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। অতীতের গবেষণাগুলি শৈবাল ব্লুম থেকে নির্গত বিষের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির ক্ষতির যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল