প্রায় ৭০ বছর আগে ইতালির পোম্পেই শহরের কাছাকাছি একটি প্রাচীন গ্রিক উপাসনালয় থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ব্রোঞ্জের পাত্রে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল কমলা রঙের এক অদ্ভুত, চটচটে পদার্থ। এতদিন ধরে এই রহস্যময় গাঢ় গন্ধযুক্ত পদার্থটির প্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, অবশেষে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন সেটি ছিল খাঁটি মধু।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুসিয়ানা দা কোস্তা কারভালহো ও তাঁর দল সর্বাধুনিক গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি ও মাস স্পেকট্রোমেট্রি প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে জানান, এই গাঢ় পদার্থটির রাসায়নিক গঠন আধুনিক মধু ও মৌমাছির মোমের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষিত থাকার ফলে এর মধ্যে উচ্চ মাত্রার অ্যাসিড পাওয়া গেছে, যা শর্করার অবক্ষয়ের ফলে তৈরি ফিউরান যৌগের কারণে স্বাভাবিক।
প্রাচীন এই উপাসনালয়টি খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০ সালের দিকে ইতালির পায়েসতুম শহরের এক গ্রিক বসতিতে স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে খননের সময় এখানে একটি ফাঁকা লোহার খাট, ছয়টি হাইড্রিয়া (জলপাত্র), দুটি আম্ফোরা (মদ বা তেল রাখার পাত্র) এবং ব্রোঞ্জের কয়েকটি পাত্র আবিষ্কৃত হয়। ঠিক কোন দেবতার উদ্দেশ্যে এই উপাসনালয় উৎসর্গ করা হয়েছিল তা এখনও অজানা। তবে গবেষকরা মনে করেন– ফাঁকা খাট এবং উপাসনালয়ের অপ্রবেশ্যতা সেই দেবতার উপস্থিতির প্রতীক।
গবেষকরা জানান, মধু ছিল প্রাচীন গ্রিসে অমরত্বের প্রতীক, দেবতাদের প্রিয় নিবেদন এবং একাধারে খাদ্য, ওষুধ, প্রসাধনী ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত এক মূল্যবান উপাদান। গ্রিক পুরাণ মতে, শিশুকালে দেবতা জিউস মধু খেয়েই বড় হন। ফলে দেবতার উদ্দেশ্যে এই মধুর নিবেদন একেবারেই যথাযথ।
গবেষণা দলের প্রধান দা কোস্তা কারভালহো বলেন, প্রাচীন পদার্থগুলোর মধ্যে শুধু খাবার নয়, থাকে সংস্কৃতি, ধর্ম, বিজ্ঞানের ছাপ। এরা একেকটি জৈব-রাসায়নিক ইকোসিস্টেমের মতো।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল