জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শাসনব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুগুলোতে কার্যকর নেতৃত্ব এবং অংশীজনদের মধ্যে যৌথ উপলব্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) ক্যাপস্টোন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। এছাড়া গতকাল সেনা সদরে তিনি রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যদের প্রশংসনীয় অবদানের জন্য সম্মাননা (প্রশংসাপত্র) দেন। গতকাল সেনা সদরে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
ক্যাপস্টোন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, কৌশল এবং উন্নয়নসংক্রান্ত জাতীয় উদ্বেগের ক্ষেত্রে একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে। ক্যাপস্টোন কোর্স এই কলেজকে এমন একটি অনন্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে, যেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়ন বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারেন।’
তিনি বলেন, এর লক্ষ্য অংশগ্রহণকারীদের জাতীয় ইস্যু ও চ্যালেঞ্জগুলো বুঝে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম করে তোলা এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মনোভাব তৈরি করা। আমি আনন্দিত যে ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি এই কোর্সের প্রাসঙ্গিকতা ও বিভিন্ন সংস্থার আস্থার প্রতিফলন।’
সেনাপ্রধান জাতি গঠনের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৌশলগত নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে আরো কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য গতিশীল ও সংস্কারমুখী নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোকপাত করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিদ্যমান পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নতুন জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ক্যাপস্টোন কোর্স কৌশলগত অন্তর্দৃষ্টি, সহযোগিতা ও জ্ঞানভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
ক্যাপস্টোন ফেলোদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনারা কোর্স চলাকালীন দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। আমাদের দেশ গত পাঁচ দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আপনারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক লিডার হিসেবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন এবং দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে অবদান রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এনডিসি আপনাদের জন্য একটি অনুকূল জ্ঞানভিত্তিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পেরেছে। এই কোর্সে অর্জিত বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিজ্ঞতা আপনাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই বন্ধুত্ব ভবিষ্যতে নতুন উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’
সেনাপ্রধান কোর্সটি সফলভাবে সম্পন্ন করায় ক্যাপস্টোন ফেলোদের এবং কোর্স পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এই কোর্সে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সিনিয়র চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সর্বমোট ৪৫ জন ফেলো অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, এনডিসির ফ্যাকাল্টি ও স্টাফ অফিসাররা এবং জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী সেনা সদস্যদের প্রশংসনীয় অবদানের জন্য সম্মাননা (প্রশংসাপত্র) দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল সেনা সদরে তাঁদের সম্মাননা দেন তিনি। সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক ও অন্য স্টাফদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা সদস্যদের সাহসিকতা ও মানবিক আচরণ সেনাবাহিনীর পেশাগত মানদণ্ডের প্রতিফলন, যা ভবিষ্যতে সব সেনা সদস্যের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
ওই উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে গতকাল দুপুরে সেনা সদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করে। সেনা সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পেশাদারির সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ওই দুর্ঘটনায় আহত ৪১ জনকে সিএমএইচ ঢাকায় চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ১১ জন এখনো সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর ২৯ জন সেনা সদস্য শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন এবং বর্তমানে একজন সেনা সদস্য সিএমএইচ ঢাকায় চিকিৎসাধীন। মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনায় মোট ১৪টি মরদেহ সিএমএইচে আনা হয়। পরে তাদের পরিবারের কাছে এসব লাশ হস্তান্তর করা হয়।