বাহারুল আলম সোহাগ। বয়স ৬২। দীর্ঘদেহী। মুখে লম্বা দাড়ি। শিক্ষকতা থেকে অবসরে এলেও তিনি থেমে নেই। ৪৫ বছর ধরে তিনি দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়াম ও জেলায় ছুটেছেন অটোগ্রাফের নেশায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হন, ছবি তোলেন ও অটোগ্রাফ নেন। বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ৪৫ জন খেলোয়াড়, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অধিকাংশের অটোগ্রাফ তিনি সংগ্রহ করেছেন। ফুটবলার সালাউদ্দিন, জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শংকর হাজরাসহ দেশের জনপ্রিয় ফুটবলারদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন তিনি। এ পর্যন্ত তিনি ৩০০ খেলোয়াড়ের অটোগ্রাফ নেন। এ ছাড়া নায়ক, গায়কদেরও অটোগ্রাফ নিয়েছেন। নায়করাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে গায়ক আবদুল হাদী ও সাবিনা ইয়াসমিনও আছেন সে তালিকায়। দেশের সঙ্গে বিদেশি খেলোয়াড় পাকির আলী, গণেশ থাপাসহ অনেকের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেছেন। অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছেন। কেউ কেউ তার খোঁজও নেন। কয়েকজন তাঁকে দেখতে তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দত্তপুরেও চলে আসেন। বিশেষ করে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে কোনো খেলা হলে তিনি তা দেখা বাদ দেন না। এ ছাড়া তিনি পত্রিকার পাতার কোনো প্রতিবেদন ভালো লাগলে তা কেটে লেমিনেটিং করে পরিচিতজনদের ডাকযোগে পাঠান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের শনিবার সকালের পাতার প্রতিবেদন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। কুমিল্লার লালমাই বাজার পেরিয়ে দত্তপুর গ্রাম। বাড়ির উত্তর ভিটায় বাহারুল আলম সোহাগের বসবাস। তিনি খেলোয়াড়দের অটোগ্রাফ লেমেনেটিংয়ের পর বাইন্ডিং করেছেন। সেগুলো বাড়ির বারান্দায় টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন।
এ ছাড়া কোন খেলোয়াড় কত সালে কী পুরস্কার পেয়েছেন, তার তালিকা বাঁধাই করে রেখেছেন। রয়েছে খেলা নিয়ে নানা বই। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে কয়েক শ ক্রীড়া ম্যাগাজিন। তাঁর অটোগ্রাফের মধ্যে বেশি রয়েছে ফুটবলারের অটোগ্রাফ। এরপর রয়েছে ক্রিকেট, হকি, ভলিবল ও দাবা খেলোয়াড়দের অটোগ্রাফ। স্মৃতির অ্যালবামগুলো তিনি উল্টেপাল্টে দেখেন আর ফিরে যান সোনালি অতীতে। বাহারুল আলম সোহাগ বলেন, ‘আমার প্রিয় ফুটবল খেলা। কলেজ জীবনে বেশ খেলেছি। এক সময় শারীরিক সমস্যায় আর নিয়মিত খেলা হয়নি। তবে খেলার নেশা আমাকে ছাড়েনি। খেলা দেখতে, খেলোয়াড়ের সঙ্গে দেখা করতে আর ছবি তুলতে আমার বেশ ভালো লাগে। পরিচিতজনরা আমার সংগ্রহ দেখতে আসেন। ৪০-৪৫ বছর আগের অটোগ্রাফ দেখে তারা অভিভূত হন। আমারও এগুলো দেখে দারুণ সময় কাটে।
একটি ক্রীড়া জাদুঘর করার ইচ্ছা রয়েছে। অটোগ্রাফ সংগ্রহকে অনেকে পাগলামি বললেও আমার স্ত্রী হোসনেয়ারাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা এ নিয়ে উৎসাহ দেয়।’ তাঁর মেয়ে রামিসা সালমা বাহার বলেন, মানুষের অনেক ধরনের শখ থাকে। বাবার শখ খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করা ও অটোগ্রাফ নেওয়া। বাবা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাঁকে আমরা সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকি। তাঁর আনন্দ দেখে আমাদের ভালো লাগে।’ প্রতিবেশী তরুণ সাদ্দাম হোসেন সুমন বলেন, ‘তিনি ক্রীড়াপাগল মানুষ। প্রতিদিন সাতটি দৈনিক পত্রিকা পড়েন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেলার খবর পড়ে থাকেন। তিনি এই বয়সেও শিশুদের সঙ্গে খেলতে নেমে যান। তাঁকে দেখে খেলার প্রতি আমাদেরও আগ্রহ বাড়ছে।’