বাংলাদেশ পূজা অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ), অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে সিডনির তেলোপিয়া ডান্ডাস কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো মহালয়া উপলক্ষে এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ২১ স্টার্ট স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে চণ্ডীপাঠ, ভক্তিমূলক সংগীত এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল ধারাবাহিক চণ্ডীপাঠ, যেখানে শঙ্খ, উলুধ্বনি ও আগমনী গানের সুরে মিলিয়ে এক গভীর আধ্যাত্মিক আবেশ সৃষ্টি হয়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্বরধ্বনি আর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সেই চিরচেনা আবৃত্তির ছায়া যেন মঞ্চজুড়ে ফিরে এলো ভোরের অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্মৃতিবিজড়িত মুহূর্তে।
চণ্ডীপাঠ ও সংগীত পরিবেশন করেন জ্যোতি বিশ্বাস, সুমিতা দে, জন্মেজয় রায়সহ প্রায় দুই ডজন শিল্পী, যাদের নিবেদিত অনুশীলন ও শৈল্পিক উপস্থাপনা মিলিয়ে শ্রোতাদের জন্য তৈরি হয় এক মনোযোগী শ্রবণ–অভিজ্ঞতা। গায়নভঙ্গি, স্বরলয় ও নাটকীয়তার সংমিশ্রণে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী।
অনুষ্ঠানের শিল্প নির্দেশনা ও সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিপিএ–র সংস্কৃতি সম্পাদক রাখি রায় (বাবলি)। তাঁর মেন্টরশিপ ও সংগঠনিক দক্ষতায় তরুণ শিল্পীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরেন। চণ্ডীপাঠের পাশাপাশি পরিবেশিত হয় ভক্তিমূলক সংগীত ও নির্বাচিত স্তোত্র, যা চণ্ডীপাঠের গাম্ভীর্যের সঙ্গে সংগীতের মাধুর্যকে পরিপূরক করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহালয়ার তাৎপর্য, দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের প্রতীকী ব্যাখ্যা, এবং ‘গজে আগমন, দোলায় গমন’ এর মঙ্গল সংকেত তুলে ধরা হয়। উপস্থাপকদের ধারাবাহিক ব্যাখ্যায় উঠে আসে মহালয়া ও দেবীপক্ষের ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য- যা তরুণ প্রজন্মের মাঝে উৎসবের প্রতি গভীর আগ্রহ ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের স্বেচ্ছাসেবকরা স্টেজ ম্যানেজমেন্ট, অতিথি অভ্যর্থনা ও দর্শক নির্দেশনায় অংশ নিয়ে নেতৃত্ব ও দলগত সমন্বয়–দক্ষতা প্রদর্শন করে। এই প্রক্রিয়া প্রজন্মান্তরের মধ্যে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন বিপিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিবাকর সমদ্দার।
বিপিএর সহসভাপতি অভিজিৎ সাহা বলেন, ‘মহালয়ার প্রার্থনা শুধু ব্যক্তিগত মুক্তি নয়, এটি মানুষের, প্রকৃতির এবং সমগ্র বিশ্বের মঙ্গলকামনায় নিবেদিত। তাই আমাদের এই আয়োজন শুভ শক্তির জাগরণ, অন্তর্ভুক্তি ও সমবেত প্রয়াসের এক প্রতীক।’
বিপিএর সাবেক সভাপতি দিলিপ দত্ত জানান, ‘প্রবাসে থেকেও আমরা যেন আমাদের শিকড়ের টান ভুলে না যাই- এই ধরনের আয়োজন আমাদের সংস্কৃতি ও উৎসবের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন বজায় রাখে, পারিবারিক ও সামাজিক মিলনের আবহ সৃষ্টি করে।’
বিপিএর সভাপতি সুকুমার ভক্ত উপস্থিত দর্শক, শিল্পী, প্রযুক্তি–দল, স্বেচ্ছাসেবক, স্পনসর এবং স্থান ব্যবস্থাপনার সহায়তাকারীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ ধন্যবাদ জানানো হয় সংস্কৃতি সম্পাদক রাখি রায় (বাবলি)-কে, যাঁর শিল্প নির্দেশনায় এবং নিবিড় প্রশিক্ষণে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে সার্থক ও স্মরণীয়।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ