‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর কতিপয় ধারা সংশোধনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস)।
বুধবার বাকাসস ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হাজী মো. মুসা খান এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশ্রাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৫ মে, ২০২৫ তারিখে জারিকৃত "সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫" (অধ্যাদেশ নং ২৬, ২০২৫) এর কতিপয় বিধান সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে। এই অধ্যাদেশটি "সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮" এর একটি সংশোধনী হলেও, এর ধারাগুলো কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার ও কর্মপরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি।
আমরা অধ্যাদেশের নিম্নলিখিত ধারাগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
বিভাগীয় মামলা ব্যতিরেকে শাস্তি প্রদানের বিধান: অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিভাগীয তদন্ত ও যথাযথ শুনানির সুযোগ ব্যতিরেকে সরাসরি শাস্তি প্রদানের যে বিধান রাখা হযেছে, তা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এটি কর্মচারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার খর্ব করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
শাস্তিযোগ্য অপরাধের সংজ্ঞা: অধ্যাদেশে উল্লেখিত "অবাধ্যতা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ" এবং "অন্য কর্মচারীকে কাজ থেকে বিরত থাকতে প্ররোচনা" এর মতো অপরাধগুলোর সংজ্ঞা অস্পষ্ট ও ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। এর ফলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে কোনো কর্মচারীকে হযরানি করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
দ্রুত শাস্তি প্রদানের প্রক্রিয়া: নির্ধারিত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব এবং পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দণ্ড আরোপের বিষযে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান- এই প্রক্রিয়াটি কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত স্বল্প সময়। এর ফলে তাদের পক্ষে অভিযোগের সঠিক জবাব দেওয়া এবং নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করা কঠিন হবে।
শাস্তির কঠোরতা: উল্লেখিত অপরাধের জন্য পদাবনতি, নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্তের মতো কঠোর শাস্তির বিধান অযৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এটি কর্মচারীদের জন্য চরম অবিচার বয়ে আনবে।
প্রধান উপদেষ্টা, আমরা বিশ্বাস করি যে কোনো আইনেই কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার ও কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এই অধ্যাদেশটি সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে, যা তাদের কর্মস্পৃহা ও দক্ষতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এতে সরকারি সেবা প্রদান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় "সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫" এর উল্লিখিত ধারাসমূহ সংশোধনপূর্বক সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা আপনার সহানুভূতিশীল পদক্ষেপের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত/ইই