তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কাল শনিবার ঢাকায় আসছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। বিমানবন্দরে তাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে অন্তত তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. আসাদ আলম সিয়াম। এদিকে শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফর দেশ দুটির মধ্যকার সহযোগিতার বন্ধনকে আরও সুসংহত করবে বলে জানিয়েছে ভুটান। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ সদস্যের সফরকারী উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল থাকবে। এ দলে ভুটানের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী এবং শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, শনিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার গ্রহণ করার পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। এদিন দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন, সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া, শিল্পসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয়েও আলোচনা হবে বলে আশা করা যায়।
বৈঠক শেষে ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, ভুটানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং কৃষি সহযোগিতাবিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়গুলো এখনো আলোচনাধীন। একই দিন রাতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সফরের দ্বিতীয় দিন রবিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। সোমবার সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী থিম্পুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাবেন।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি ভুটানের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সৌহার্দ ও আন্তরিকতার ওপর ভিত্তি করে, দুই দেশের জনগণের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। আসন্ন সফরে এ সম্পর্ক আরও বিস্তৃত ও গভীর করার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর দুই দেশের সহযোগিতার বন্ধনকে আরও সুসংহত করবে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ সফর ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার বন্ধনকে আরও সুসংহত করবে, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে অংশীদারি ও সহযোগিতার নতুন দ্বার তৈরি করবে।