উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক ছাড়াই। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সিনিয়র শিক্ষক না থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ নানান জটিলতা ও সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের (৫০তম) তথ্য বলছে, দেশের ১২ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে অধ্যাপক ছাড়াই। ২০২৩ সালের তথ্য নিয়ে সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউজিসি।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অধ্যাপক নেই। জানা গেছে, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও কোনো অধ্যাপক নেই। প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো শিক্ষক নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদককে জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বেশ কয়েকজন অধ্যাপক রয়েছেন।
তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে গবেষণার নেতৃত্ব দেন অধ্যাপকরাই। অধ্যাপক না থাকলে গবেষণা কার্যক্রম হ্রাস পায় উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোয়। বাধাগ্রস্ত হয় গবেষণা প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পাঠক্রম সংশোধন, নীতি প্রণয়নেও অভিজ্ঞতার অভাব দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত অধ্যাপক না থাকলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও জটিলতা ও সংকট দেখা দেয়।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধ্যাপক না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল শিক্ষার মানেই নয়, গবেষণা, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক উন্নয়নেও বড় ধরনের সংকটে পড়ে। তাই টেকসই উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে যোগ্য অধ্যাপক নিয়োগ ও ধরে রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাঁদের অনুপস্থিতিতে গবেষণা কার্যক্রমে ভাটা পড়ে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও আন্তর্জাতিক র্যাংকিং ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান, অনুষদ ডিন কিংবা সিন্ডিকেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় অভিজ্ঞ অধ্যাপকের প্রয়োজন হয়। তাঁদের ঘাটতিতে প্রশাসনিক জটিলতা বৃদ্ধি পায় এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা দেখা দেয়।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী আমলে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর অনেকটিতে অবশ্য পাঠদানও শুরু হয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের সংকটসহ নানান কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অভিজ্ঞ বা অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর ফলে গুণগত পাঠদানের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, গবেষণায়ও পিছিয়ে পড়ছি আমরা। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জনবল নিয়োগের বিষয় ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করছি।’
শিক্ষার্থীরাও বলছেন, অধ্যাপকের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে একাডেমিক দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে। তরুণ শিক্ষকরা যদিও চেষ্টা করেন, কিন্তু অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে গভীরতর পাঠদান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ইউজিসির তথ্য বলছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক রয়েছেন ১৭ হাজার ৪২ জন। অধ্যাপক ৫ হাজার ৩৮৭, সহযোগী অধ্যাপক ৩ হাজার ৮৫, সহকারী অধ্যাপক ৫ হাজার ১৯৮ ও প্রভাষক ২ হাজার ৩৪১। অন্য শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ৩১ জন।