বাংলাদেশে বিশ্বমানের হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন করতে চায় ব্রাজিল। দেশটি প্রক্রিয়াজাত এ মাংস উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশসহ জিসিসিভুক্ত রাষ্ট্র, যেমন : মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, তুরস্কের মতো দেশে রপ্তানি করবে। বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দিলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের টার্গেট রয়েছে ব্রাজিলের। এ শিল্পে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
বিশ্বে হালাল মাংস রপ্তানির শীর্ষস্থানীয় দেশ ব্রাজিল। প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ হালাল মাংস রপ্তানি করে তারা। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশেও হালাল মাংস রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন সম্পর্কিত জটিলতায় সে প্রস্তাব আটকে যায়। এখন বাংলাদেশেই হালাল মাংসের শিল্প স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ শিল্পে প্রক্রিয়াজাত শতভাগ মাংস রপ্তানি হবে বিদেশে। সূত্র জানায়, ৭ আগস্ট ঢাকাস্থ ব্রাজিল দূতাবাস এ শিল্প স্থাপনের আগ্রহ জানিয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশকে হালাল মাংস রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। জানা গেছে, হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বাংলাদেশে স্থাপনের বিষয়ে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে ব্রাজিল। প্রথমত, বাংলাদেশে মজুরি ব্যয় ব্রাজিলের তুলনায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম। এ ছাড়া বাংলাদেশ কারখানা স্থাপন করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় হালাল মাংস রপ্তানির সুযোগ পাবে ব্রাজিল।
বিডার কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এ ধরনের শিল্প স্থাপনের পর কাঁচামাল হিসেবে মাংস আমদানি হবে ব্রাজিল থেকে। সে কারণে প্রচলিত আমদানি নীতির কিছু বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
আমদানি নীতি আদেশ-২০২১-২০২৪-এর ২১(৩৩) অনুযায়ী, গরু-ছাগল, মুরগির মাংস ও মানুষের খাওয়ার উপযোগী অন্যান্য মাংস আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হয়; মোড়কের গায়ে রপ্তানিকারক দেশের মাংস উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এমবুস বা প্রিন্টেট থাকতে হয়; সংরক্ষণের পদ্ধতি উল্লেখ থাকতে হয় এবং পৃথক লেবেল ছাপিয়ে মোড়কের গায়ে লাগানো যায় না। বিডা বলছে, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আমদানি নীতি আদেশে এই বিধানটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে ব্রাজিল কর্তৃক স্থাপিত শিল্পের প্রক্রিয়াজাত শতভাগ মাংস যেহেতু বিদেশে রপ্তানি হবে, সে কারণে কাঁচামাল হিসেবে আমদানিতব্য মাংসের ক্ষেত্রে আলোচ্য বিধানটি প্রযোজ্য হবে না বলে মনে করছে বিডা। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া, বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বেজা ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) আমদানি নীতির ওই ধারাটি শিথিলযোগ্য। সে কারণে বাংলাদেশে স্থাপিতব্য ব্রাজিলের শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে মাংস আমদানির ক্ষেত্রে ওই ধারাটি শিথিলযোগ্য হতে পারে বলে মনে করছেন বিডার কর্মকর্তারা।