চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলাকায় দুই দিনের সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ ১৩টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত দুজনের অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। তারা বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এর আগে সোমবার সকালে ভাস্কুলার ইনজুরি হওয়ায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। ৩০ ও ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় চবির অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের চবির ৮টি বাস ও ৯টি অ্যাম্বুলেন্সে করে চমেক হাসপাতালসহ নগরের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও চবি ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠন বেলা ১২টায় উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। আমরা ব্যর্থ প্রশাসনের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান নিয়েছি। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রশাসন সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি। মামলা দায়েরও হয়নি। তাই আমরা পদত্যাগ দাবি করছি। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা ও জিডি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা যা করা দরকার সব করছি। হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাউসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মামলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আবদুল্লাহ আলম মামুন (২৪) ও ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম (২৪) নামের দুই শিক্ষার্থীকে পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এরপর তাদের অপারেশন হয়। দুজনই ক্রেনিওটমি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে মামুনের মাথার খুলি খুলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, গতকাল সাইফুল (২১) ও বাহারুল ইসলাম (২২) নামের দুই শিক্ষার্থী ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ১১ জন।
পার্কভিউ হাসপাতালের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আইসিইউতে থাকা দুজনের অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। একজনের মাথার খুলি খুলে রাখা হয়েছে। তবে অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।
সিন্ডিকেটে নেওয়া সিদ্ধান্ত : সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া অন্যতম সিদ্ধান্তগুলো হলো- আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসা ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের বহন করা। আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মডেল থানা, রেলগেটে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক ভবন/কটেজ মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ভাড়া ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়নের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করা। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার লক্ষ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট ৫টি ছাত্র হল ও ৫টি ছাত্রী হল নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রস্তুত করা। বিদ্যমান আবাসিক হলগুলো সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের বসবাস উপযোগী করা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রাখা ও টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও দোষীদের চিহ্নিতকরণের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা। স্থানীয় নিরীহ মানুষের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তা পূরণের জন্য সরকারকে অনুরোধ করা এবং এই কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করা।