রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুঃখগাথা একটি নদীর নাম তিস্তা। এই নদী প্রতি বছর বর্ষায় এবং খরা মৌসুমে মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারী করছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। আগামী বছরের জানুয়ারিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমীক্ষা শুরু হবে। সমীক্ষা চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। সমীক্ষায় উঠে আসবে কত টাকা লাগবে। কীভাবে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলবে। কিন্তু সমীক্ষা শুরুর নামে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। কারণ ইতোমধ্যে চীনা প্রতিনিধিদল একাধিকবার নদী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ২০২৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত যদি সমীক্ষাই চলে তাহলে এর প্রকৃত বাস্তবায়ন কাজ কবে শুরু হবে। শেষ হবে কবে এ নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে স্থানীয়রা তিস্তা পাড়ের পাঁচ জেলার ১২ উপজেলায় মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ ছাড়া একাধিকবার চীনা প্রতিনিধিদল তিস্তাপাড়ের মানুষের সঙ্গে এবং রংপুরের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান রংপুরে বলেছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীনা প্রতিনিধিদের মতবিনিময় এবং সরকারের উপদেষ্টার আশ্বাসে তিস্তাপাড়ের মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। গত ২২ জুলাই চীনদূতাবাসের ডিরেক্টর অব দ্য পলিটিক্যাল সেকশনের কর্মকর্তা জং জিং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে চীনা কর্মকর্তা জং জিং বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে গিয়ে রংপুরে একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের কথা বলেছেন। আমরা তা বাস্তবায়নে কাজ করছি। তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমীক্ষা হবে। এই সমীক্ষা চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এর পরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. মিজানুর রহমান বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর আগে অনেক কাজ রয়েছে। যেমন জমি অধিগ্রহণ, সীমানা চিহ্নিতকরণ, মাটি উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজ রয়েছে। এসব কাজ সময় সাপেক্ষের ব্যাপার। জানুয়ারিতে সমীক্ষা শুরু হলে সেটিও একটি কাজের অংশ মনে করা যেতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।