বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে মানব পাচারের শিকার হন। এটা অপরাধমূলক সমস্যা। ইউরোপে অবৈধ প্রবেশের চেষ্টাকারীদের সংখ্যায় এখন শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশিরা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশে অভিবাসন বিষয়ক জাতিসংঘ নেটওয়ার্ক (বিডিইউএনএনএম) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আশিক সাঈদ, অপরাধ তদন্ত বিভাগের ইকরামুল হাবিব, ইমিগ্রেশন, বিশেষ শাখার মো. আসাদ উল্লাহ চৌধুরী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. আবুল হাসনাত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন টু বাংলাদেশের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সুজিন কং, জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থার বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ল্যান্স বোনো প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে মানব পাচার মোকাবিলার বর্তমান পরিস্থিতি’- শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উপসচিব আমিনুল ইসলাম। প্রবন্ধে তিনি বলেন, গত বছর পর্যন্ত মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনালে ৪ হাজার ২৯১টি মামলা চলমান আছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ হাজার অভিযুক্তকে। একই সময়ে ৬৬২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নতুন করে ১ হাজার ৭৯টি মামলা করা হয়েছে। মানব পাচার দমন আইনে পাঁচজন মানব পাচারকারী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। খন্দকার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মানব পাচার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ চক্র ভেঙে ফেলার জন্য আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মানব পাচার প্রতিরোধে সাতটি বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল স্থাপনকে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া পাচারপ্রবণ এলাকায় আরও ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ এবং জাতীয় রেফারেল ব্যবস্থাপনা চালু করার কথাও জানান তিনি। ইকরামুল হাবিব বলেন, খুলনা অঞ্চলের মানুষরা বেশি মানব পাচারের শিকার হন। সেখানকার মানুষ খুবই দরিদ্র। অনেক জেলা আছে যেগুলো সীমান্তের সঙ্গে ঘেঁষা যেমন- ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা। ওই অঞ্চলগুলো মানব পাচারপ্রবণ এলাকা। পাচারকারীরা এ সুযোগ নিয়ে অপরাধগুলো করে থাকে। আবুল হাসনাত বলেন, মানব পাচারের শিকার অধিকাংশ মানুষই তাদের কাছের মানুষদের কাছ থেকে প্রতারিত হন।
ড. বার্ন্ড স্প্যানিয়ার বলেন, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই ৯ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে এই সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের অনেকে লিবিয়ার ক্যাম্পে আটক, নির্যাতন এবং চরম চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। তাদের বয়স ছিল ১৪ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তারা মিথ্যা চাকরির প্রতিশ্রুতিতে প্রলোভিত হয়েছিলেন। ল্যান্স বোনো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে মানব পাচারের শিকার হন। শিশুরাও এর থেকে রেহাই পায় না। অবৈধভাবে বিদেশে পাঠিয়ে তাদের জোর-জবরদস্তিভাবে কঠিন শ্রম করানো হয়। পতিতাবৃত্তি করানো হয়। বিশেষ করে মহিলা ও শিশু।
সুজিন কং বলেন, বাংলাদেশ মানব পাচারকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা অপরাধের মধ্যে অন্যতম একটি। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন মানুষ এর শিকার হন।