শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে মানসম্মত নতুন বই তুলে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নিম্নমানের বই এড়াতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নানান শর্ত। আসছে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপা হবে অফ হোয়াইট কাগজে। কাগজে বাড়তি কোনো কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্য, রং মেশালেই বাতিল করে দেওয়া হবে বই। সব বই হবে চার রঙের। অনেক শ্রেণিতে ইতোমধ্যেই বই ছাপার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নানা প্রক্রিয়া শেষে আগামী আগস্টে শুরু হচ্ছে বই ছাপার কাজ। এনসিটিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী শিক্ষাবর্ষের বইয়ের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন থেকে জানা গেছে মাধ্যমিক, দাখিল ও ভোকেশনালে বইয়ের ক্ষেত্রে কাগজ হতে হবে ৭০ জিএসএম। উজ্জ্বলতা হতে হবে কমপক্ষে ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া বার্স্টিং ফ্যাক্টর হতে হবে ২০। এবারের বইয়ে কাগজের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বা রং ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ন্যাচারাল শেডের স্পট মুক্ত অফ হোয়াইট প্রিন্টিং পেপারে এসব বই ছাপাতে হবে। প্রি-প্রাইমারি ও ইবতেদায়ির ক্ষেত্রে বইয়ের কাগজ হতে হবে ৮০ জিএসএমের। সব শ্রেণিতেই বই হবে অফ হোয়াইট কাগজের। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপানো হবে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, আগের বছরগুলোতে অফ হোয়াইট প্রিন্টিং পেপারের সঙ্গে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে কাগজের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করত ছাপাখানাগুলো। এর ফলে শিক্ষার্থীরা পেত নিম্নমানের বই। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের কেমিক্যাল ও রং মেশানোর ফলে বই থেকে দুর্গন্ধ ছড়াত। এসব নিম্নমানের বইয়ের কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলত। এনসিটিবি সূত্র বলছে এবার কেমিক্যাল ও রং মেশানোর সুযোগ না থাকায় বই হবে পরিবেশসম্মত। পাল্পের ন্যাচারাল কালারের মতোই বই পাবে শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, বই ছাপা শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছে দিতে আগামী আগস্ট থেকেই ছাপার কাজ শুরু করতে চায় এনসিটিবি। সে লক্ষ্যে প্রাক্-প্রাথমিক, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বইয়ের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই অন্য শ্রেণির বইয়েরও টেন্ডার আহ্বান করা হবে। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী আগস্ট থেকেই বই ছাপা শুরুর কার্যাদেশ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “আগামী শিক্ষাবর্ষের বইয়ের জন্য মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস করব না আমরা। উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীরা যেমন কাগজে বই পায় তেমন মানসম্মত কাগজেই বই দেওয়া হবে। বইয়ের কাগজে কোনো ধরনের ‘মিক্সিং’ মেনে নেওয়া হবে। যারা বইয়ের ছাপার কাজ নেবেন তাদের এসব শর্ত মেনেই কাজ নিতে হবে।”
বই কমবে ৪ কোটি : মাঠপর্যায় থেকে বইয়ের চাহিদা এনে বই ছাপানো হয় প্রতি বছর। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য শিক্ষার্থী ধরে চাহিদা দেয়। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি বইয়ের চাহিদা দিত। আগামী শিক্ষাবর্ষে বই ছাপার কাজের জন্য এনসিটিবি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায় থেকে যাচাইবাছাই করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া চলতি বছরে দশম শ্রেণিতেও বই বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যে বই পেয়েছে, তা দিয়ে আগামী শিক্ষাবছরে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করবে। তাই দশম শ্রেণিতে এবার কোনো বই বিতরণ করতে হবে না। সব মিলে প্রায় চার কোটি বই কম লাগবে আগামী শিক্ষাবছরে।