পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে নিজ বাসায় খুন হন শেওড়াপাড়ায় তোরাব আলী মসজিদের পাশের ভবনে বসবাসরত দুই বোন। শুক্রবার রাত ১১টায় পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে। শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত। পরে মামলাটির তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি খুনে জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে।
জানা গেছে, নিহত মরিয়ম বেগম (৬০) ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগম (৫২) সপরিবারে পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় ৬৪৯ নম্বর নার্গিস ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। বাসার ভেতর থেকে রক্তমাখা ছুরি ও শিলপাটা জব্দ করা হয়েছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গলার পেছন, পেট-পিঠে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত এবং শিলপাটা দিয়ে পিটিয়ে দুই বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া জানান, মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। ঘটনার অনেক কিছু উদ্ঘাটন করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে সবাই ফলাফল জানতে পারবে। ডিবি সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল এবং আশপাশের সিসিটিভির তিনটা ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর ওইসব ফুটেজে দুজন লোককে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আটকের পর নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তাদের দেওয়া তথ্যের অন্যান্য প্রমাণও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মরিয়ম বেগমের ছোট বোন সুফিয়া অবিবাহিত। তিনি মানসিকরোগী এবং বড় বোনের সঙ্গেই থাকতেন। মরিয়মের একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শুক্রবার সকালে নুসরাত তার মা ও খালাকে বাসায় রেখে গুলশানে নিজ কর্মস্থলে যান। মরিয়মের স্বামী কাজী আলাউদ্দিন বরিশালের বাবুগঞ্জে থাকেন। তিনি বন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। প্রতি মাসে দু-একবার ওই বাসায় পরিবারের কাছে আসেন। শুক্রবার রাত ৮টায় নুসরাত বাসায় ফিরে দরজা নক করে বাসার ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। পরে তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে তিনি ভেতরে ঢুকে মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ডাইনিং রুমের মেঝেতে এবং খালাকে শোবার ঘরের মেজেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং তারা মিরপুর থানায় খবর দেন। রাস্তার পাশেই দোতলায় ওই বাসার দরজা-জানালা ও গ্রিল অক্ষত দেখা গেছে। বাড়ির কেয়ারটেকারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তিনি জানান, সকালের পর চেনাজানা লোকেরা ওই বাসায় ঢোকেন। হয়তো সন্ধ্যার দিকে দুই বোনকে খুন করে পালিয়ে যান। পরিবারটি প্রায় ২০ বছর ধরে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। নিহত মরিয়ম বিআইডব্লিউটির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।