চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে বাকলিয়া স্টেডিয়াম। দীর্ঘদিন ধরে নামেই স্টেডিয়াম থাকলেও এবার এই স্টেডিয়ামকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ইতোমধ্যে ফর্টিস গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তোলার জন্য দেওয়া হয়েছে। ফলে এই স্টেডিয়াম ঘিরে নতুন করে স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এরইমধ্যে নদীর পাড়ের এই বাকলিয়া স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রূপান্তরের ঘোষণা করেছেন। এতে করে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন ক্রীড়ামোদীরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এই মাঠটি কর্ণফুলীর পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্ভব হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় ছোট ছোট গ্যালারিসহ আধুনিক মাঠ তৈরি করা হয়, তেমনি আমরাও এই মাঠকে একটি আদর্শ ক্রীড়াঙ্গনে রূপান্তর করতে চাই। চট্টগ্রাম একসময় খেলোয়াড় তৈরির কারখানা ছিল। এখন মাঠ সংকটে নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে না। তাই আমরা মাঠগুলোকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আধুনিকায়ন করছি।
তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ, ওয়াকিং স্পেস ও শিশুপার্ক গড়ে তোলা। চসিকের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সুস্থ বিনোদন নিশ্চিত করতে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এছাড়াও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সাথেও ভূমি বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকারেও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ মাঠ তৈরি হওয়ায় অস্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা সেখানে খেলতে পারছে না। এটা যেন না হয়, সে জন্য আমার লক্ষ্য প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্মুক্ত খেলার মাঠ গড়ে তোলা। শিশুদের মাঠে ফিরাতে পারলে মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের মতো সামাজিক সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলী নদীর তীরে একটি স্টেডিয়ামের প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘদিনের। প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে তৎকালীন সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্ণফুলী সেতুর পাশে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। তিনি মাঠসহ কিছু অবকাঠমো নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এরপর আরও তিনজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করলেও তাদের কেউ স্টেডিয়ামটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে রূপান্তর করার জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে নদী ঘেষে গড়ে উঠা স্টেডিয়ামটি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এই স্টেডিয়ামে যাতায়াত পুরো নগর থেকে একদম সহজ। শহরের নানা প্রান্ত থেকে একেবারে স্বল্প সময়ে এই মাঠে যাওয়া যাবে। বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই স্টেডিয়ামটিকে একটি পুর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে পরিণত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে আগের মাঠের যে অবস্থান ছিল তা থেকে প্রায় ছয় ফুটের মত মাটি ভরাট করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের দুপাশে থাকবে দৃষ্টিনন্দন গ্যালারি। তবে কোন দুই পাশে গ্যালারি হবে সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তাছাড়া স্টেডিয়ামের চারপাশে ড্রেনেজ সিস্টেম, আন্তর্জাতিক মানের ড্রেসিং রুম, ম্যাচ অফিসিয়াল কক্ষসহ নানা স্থাপনা থাকবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এরই মধ্যে মাঠে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাঠ সমতল করার কাজও চলছে। স্টেডিয়ামটির তিন পাশেরও সীমানা প্রাচীর দেওয়া আছে। কিন্তু পূর্ব পাশের একটা অংশে সীমানা প্রাচীর নেই। সেখানে বেশ কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে। যা একেবারে মাঠের ভেতরেই অবস্থান করছে। পর্যাক্রমে আশেপাশের এসব স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্টেডিয়ামটির দক্ষিণ পাশ ঘেষে বয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী। আবার তার পাশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে কালুরঘাট নতুন ব্রিজ সংযোগ সড়ক। ফলে শহর এবং শহরের বাইরে থেকেও আনায়াসেই দর্শকরা আসতে পারবে এই স্টেডিয়ামে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল