৮ জুলাই, ২০২৪ ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ। অচল হয়ে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা। আন্দোলন জোরদার এবং দাবি আদায়ে এ দিন নতুন কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি আরও জোরদার করতে ‘সর্বাত্মক বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সায়েন্সল্যাব মোড়, চানখাঁরপুল মোড়, আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করেন। বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের এ অবরোধ চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফার্মগেট মোড়ে অবস্থান নেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। মৎস্য ভবন, বাংলামোটর ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। আগারগাঁওয়ে সড়কে বিক্ষোভ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারী কয়েকজন কাফনের কাপড় পরে শুয়ে পড়েন রাস্তায়। সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন প্রতিবাদী গান, কবিতা আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা পরিচালনা করে দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ। চট্টগ্রামে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে অবরোধ করেন তারা। ঢাকাগামী কক্সবাজার পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে নগরীর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, দামপাড়া, ওয়াসা মোড় ও লালখান বাজার হয়ে টাইগার পাস গিয়ে অবরোধ ও সমাবেশ করেন তারা। কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি শহরের ভদ্রা থেকে খড়খড়ি বাইপাসের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাছের গুঁড়ি ফেলে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। খুলনা শহরের সাচিবুনিয়ায় খুলনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে খুলনা-বাগেরহাট, খুলনা-গোপালগঞ্জসহ গল্লামারী-বটিয়াঘাটা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। রংপুরের মডার্ন মোড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যশোর শহরের পালবাড়ী ভাস্কর্য মোড়ে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর সরকারি এম এম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবসংলগ্ন মুজিব সড়ক অবরোধ করেন তারা। কোটা সংস্কারের দাবিতে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন প্রতিবাদসংবলিত ফেস্টুন তুলে ধরেরন ও কোটা সংস্কারের স্লোগান দেন। এদিকে জুলাই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ একাধিক কর্মসূচি রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।