ক্যারিবীয় দ্বীপ ত্রিনিদাদে নিজের বাসায় বসে ব্রায়ান লারা হয়তো খেলা দেখছিলেন প্রোটিয়াস অধিনায়ক উইয়ান মুল্ডারের। প্রস্তুতি বোধহয় নিয়েও ফেলেছিলেন মুল্ডারকে অভিনন্দন জানানোর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ক্যারিবীয় কিংবদন্তিকে অভিনন্দন জানাতে হয়নি। মুল্ডারের হঠাৎ থেমে যাওয়ায় ক্যারিবীয় কিংবদন্তি লারার অপরাজিত ৪০০ রানের রেকর্ডটি অক্ষত রয়ে যায়। মুল্ডার থেমে যান অপরাজিত ৩৬৭ রানে। প্রোটিয়া অধিনায়কের এমন বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে হকচকিত হয়ে পড়ে ক্রিকেটবিশ্ব। চমকে যান ক্রিকেটপ্রেমীরা। তার সিদ্ধান্তে ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখতে পেলেন না ৪০০ রানের আরও একটি ইনিংস, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। অথচ যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন মুল্ডার, কোয়াড্রল সেঞ্চুরির জন্য বাকি ৩৩ রান করতে খুব বেশি সময় হয়তো নিতেন না। লারার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি অক্ষত রেখে থেমে পড়ার মাঝে অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন মুল্ডারের আত্মত্যাগের গল্প! অবশ্য ইনিংসটি খেলে মুল্ডার অনেক রেকর্র্ড নিজের করে নিয়েছেন। লারার রেকর্ড না ভাঙার কারণ বলেন মুল্ডার, ‘লারা একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। তার ৪০০ রানের রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এমন রেকর্ড কিংবদন্তিদের নামের পাশেই মানায়। যদি আবারও সুযোগ পাই, তাহলে একই কাজ করব।’
মুল্ডার হঠাৎ দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্ব পান। কেশব মহারাজের অসুস্থতায় তাঁর হাতে অধিনায়কত্বের ব্যাটন তুলে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। তাঁর মতো এমন আত্মত্যাগের গল্প লিখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলরও। ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে ৩৩৪ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর হঠাৎ ইনিংস ঘোষণায় বেঁচে যায় স্যার ডন ব্রাডম্যানের ৩৩৪ রানের রেকর্ডটি। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার ব্রাডম্যানকে টপকে নতুন রেকর্ড গড়তে আগ্রহী হননি টেলর। তিনি বলেছিলেন, ব্রাডম্যানের স্কোর ছুঁয়ে ফেলাই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।
টেম্বা বাভুমা বিশ্রামে থাকায় জিম্বাবুয়ে সিরিজে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় কেশব মহারাজকে। বুলাওয়েতে প্রথম টেস্টের অধিনায়কও ছিলেন মহারাজ। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুল্ডার করেছিলেন ১৪৭ রান। এবার তাঁর কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। নেতৃত্বের অভিষেক টেস্টেই বাজিমাত করেন মুল্ডার। ৩৩৪ বলে ৪৯ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৯.৮৮ স্ট্রাইকরেটে ৩৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে অনেক রেকর্ড গড়েন তিনি। হাশিম আমলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন মুল্ডার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন আমলা। শুধু তাই নয়, আফ্রিকা মহাদেশের যে কোনো ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরও এটি। ১৯৯৯ সালে ডারবানে গ্যারি কার্স্টেন ২৭৫ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ স্কোর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেনের, ৩৮০ রান। অধিনায়কত্বের অভিষেকে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন মুল্ডার। এর আগে নেতৃত্বের অভিষেক টেস্টে ১৯৬৮ সালে ২৩৯ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক গ্রাহাম ডাউলিং। টেস্ট অধিনায়কের ব্যক্তিগত তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। ব্রায়ান লারা অপরাজিত ৪০০ ও শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনা ৩৭৪ রান করেন। এক ইনিংসে মুল্ডারের ৪৯ চারের চেয়ে বেশি রয়েছে নিউজিল্যান্ডের জন এডরিচের। ৩১০ রান করার পথে কিউই ব্যাটার চার মেরেছিলেন ৫২টি। টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি মুল্ডারের। সবচেয়ে কম বলে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগের। ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় ব্যাটার। মুল্ডার ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন ২৯৭ বলে ৩৮ চার ও ৩ ছক্কায়। ৩৫০ রান করেন ৩২৪ বলে ৪৮ চার ও ৩ ছক্কায়।