প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে আজ চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ আকর্ষণসহ গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা, পানি ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা ইস্যু। তবে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি এই সফরের রয়েছে আঞ্চলিক গুরুত্ব। প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া অন্যদের জন্য একটি বার্তা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই সফর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীন কিংবা ভারতকে বাছাই করে থাকেন। বাংলাদেশে গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের গন্তব্য বরাবরই ছিল নয়া দিল্লি। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সীমান্ত উত্তেজনা ও ভিসা জটিলতা। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া বিশেষভাবে তাপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। এই সফর ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য এই সফর হবে এক নতুন বার্তা।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেন, চীন আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু এবং আমরা সেই বন্ধুত্বকে ধারণ করি। চীনের দিক থেকেও একই ধরনের মনোভাব আছে এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা আমরা দিচ্ছি। এই সফর থেকে আমাদের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। এবারের সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্বাক্ষর হতে পারে। এ ছাড়া কিছু ঘোষণাও আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- পানি সম্পর্ক উন্নয়নে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াবিষয়ক সহায়তা এবং গণমাধ্যম বিষয়ক সহযোগিতা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গাসংকট দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে সাত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে সমস্যার যেন সমাধান হয়। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় চীনও আমাদের সহায়তা করেছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি, সেটি নিয়ে চীন কী ভাবছে তা আমরা এই সফরে দেখতে পারব। পাশাপাশি আমাদের চিন্তাও তাদের জানাতে পারব।
ভারত-চীন সবাই বাংলাদেশের বন্ধু, প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান : প্রেস সচিব
ভারত-চীন সবাই বাংলাদেশের বন্ধু এমন মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত সীমান্ত। আমরা তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। আমরা তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে চাই। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও দূরত্ব তৈরি করবে কি না? এর জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যও বাড়ছে।’ প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানকে নিয়ে তিনি (ড. ইউনূস) দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রিন সিটি গড়ে তুলতে চান। বিশেষ করে নেপালের জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করে এই অঞ্চলে জৈব জ্বালানির ব্যবহার কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।