ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীতে নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ নিরাপত্তাবলয়। ডিএমপি ও র্যাব প্রধানের বিশেষ নির্দেশনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নজরদারিও। থাকবে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। নাড়ির টান আর প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ।
কিন্তু এত নিরাপত্তার মধ্যেও ঈদের ছুটিতে ভয় কাজ করছে নগরবাসীর মধ্যে। রাজধানীতে বেপরোয়া চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি তাদের এ ভয়ের অন্যতম কারণ। এরই মধ্যে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়াকে কেন্দ্র করে এ ভয় জেঁকে বসেছে। অফিস, ফ্ল্যাট ও বাসা ফাঁকা রেখে যাওয়া এবং ঢাকা ফাঁকা থাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। যদিও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। এদিকে, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুলিশ থাকলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।
ঈদে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বিভিন্ন বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার জুয়েলারি মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে। সাদা পোশাকেও নজরদারি থাকবে বিনোদন কেন্দ্রে। ইতোমধ্যে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম সক্রিয় রয়েছে।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে অন্য সময়ের মতো নিরাপত্তা সাজানো হয়েছে। বাড়িতে যাওয়া ও ঢাকায় ফেরা মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল, চেকপোস্ট ও ব্লক রেইড থাকবে। নিরাপদ ঈদযাত্রায় পুলিশের একগুচ্ছ পরামর্শ : নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রায় একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। গতকাল পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর গণমাধ্যমে এসব পরামর্শ পাঠান।
তিনি বলেন, যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন। চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ দেবেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন। যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুটওভার ব্রিজ নেই, সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হোন। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাবেন না। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে খাবার, পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
ঈদের নিরাপত্তায় ডিএমপির ১৪ দফা নির্দেশনা : পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদ্যাপনের লক্ষ্যে এবং ঈদে বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ১৪ দফা নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ইতোমধ্যে সব নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য অক্সিলারি পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে বাসার অর্থ, মূল্যবান সামগ্রী ও দলিল নিরাপদ স্থানে বা নিকট আত্মীয়ের হেফাজতে রেখে যেতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংক লকারের সহায়তা নিতে হবে।