গাজীপুরে বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আলাদাভাবে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী ও নগপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী এলাকার স্বাধীন গার্মেন্টের শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন চলতি মাসের ২০ তারিখে এবং ঈদ বোনাস ২৭ মার্চ তারিখে পরিশোধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চলতি মাসের বেতন কবে দেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। গত বুধবার শ্রমিকরা ওই সিদ্ধান্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানায়। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে চলতি মাসের বেতন কবে দেওয়া হবে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী উড়ালসড়কের পূর্বপাশে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারী শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই মহাসড়কে ফের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীন গার্মেন্টের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে একইদিন বিকালে সিটি করপোরেশনের নগপাড়া এলাকার এস এস সুয়েটার কারখানার শ্রমিকরা এক মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
শিল্পপুলিশ গাজীপুরের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, উভয় কারখানার শ্রমিকরা বেতনভাতা ও ঈদ বোনাসসহ পৃথক দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা করে অবরোধ রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে : শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনাদি ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতর-পূর্ববর্তী শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ছুটিসংক্রান্ত পর্যালোচনার জন্য ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৮৫তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। গত বুধবার রাতে রাজধানীর বিজয়নগর শ্রম ভবনে আয়োজিত সভায় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে সাতটি বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত হয় বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সভায় সরকার পক্ষ, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের সব বকেয়া, বেতন ও বোনাস পরিশোধ, ঈদে শ্রমিকদের ছুটি, শ্রমঘন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শ্রমঘন এলাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিসিবি পণ্য বিতরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভার সিদ্ধান্তগুলো হলো- আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত/ছাঁটাই করা যাবে না, কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিরা আলোচনা করে শ্রম আইন অনুযায়ী দ্রুত ঈদুল ফিতরের ছুটি কখন থেকে শুরু হবে তা নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী কারখানার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনাদি ২০ রমজানের মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতনের কমপক্ষে ১৫ দিনের বেতন মালিকপক্ষ তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রদান করবে, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ মালিকপক্ষের ক্যাশ ইনসেনটিভ বাবদ সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হবে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ, ছুটিসংক্রান্ত বিষয়সহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় সজাগ দৃষ্টি রাখবে, সার্বিক পরিস্থিতি কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গঠিত কমিটির পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (শ্রম) নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। ওই কমিটিতে শ্রমিক-মালিকপক্ষের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে, বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমঘন এলাকায় ২৮ ও ২৯ তারিখ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো খোলা রাখতে হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) সদস্য হিসেবে শ্রমিকপক্ষ, মালিকপক্ষ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।