পাঁচ বছর মেয়াদি স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেশির ভাগ অবকাঠামো, রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ৩৬টি অপারেশন প্ল্যান (ওপি) এর মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হয় এ কর্মসূচি। তবে এবার সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করছে সরকার।
সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা জানতে অপারেশনাল প্ল্যান সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিরিন আকতার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রস্তাবিত পঞ্চম স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচির (পঞ্চম এইচপিএনএসপি) প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান (পিআইপি) এর এক্সিট প্ল্যানে অন্তর্ভুক্তির জন্য জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অপারেশনাল প্ল্যান এর অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ ওপি, পিআইপির ভলিউম-১ (ওপি সামারি) এবং ভলিউম ২ (সব ওপির জন্য) ও ভলিউম-৩ (পিএফডি ওপির জন্য) এর সংশ্লিষ্ট অংশ পুনর্গঠন করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সফট কপিসহ হার্ড কপি প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। বিষয়টি অতীব জরুরি।’ এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। মানুষের চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্যসেবাকে সমন্বিত করার উদ্দেশে এটি করা। পুরো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি ছাতার নিচে সাজানোর চেষ্টা থেকে আমরা এটি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সেক্টর প্রোগ্রাম চলে আসছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এটাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই এটি একটি চ্যালেঞ্জের কাজ হচ্ছে। আমরা দেশবিদেশে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চেষ্টা করছি এ প্রক্রিয়া যেন সহজ হয়। দেশবিদেশের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরির কাজ করছি।’ জানা যায়, ১৯৯৮ সালে প্রথম সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে চতুর্থ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচির শেষ হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে এ প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার, পুষ্টি, কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল, নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল, হাসপাতাল সেবা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও প্রচার, মাতৃ, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন, সম্প্রসারিত টিকা কার্যক্রম (ইপিআই), জাতীয় চক্ষুসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মশালা বা সেমিনার, তথ্য ব্যবস্থাপনা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন, গবেষণা, ক্রয়, মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, যক্ষ্মা-কুষ্ঠ ও এইডস এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষাসেবা দেওয়া হয়। ডিজিজ কন্ট্রোল, হাসপাতাল সেবা ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও প্রচার, মাতৃ, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন, সম্প্রসারিত টিকা কার্যক্রম (ইপিআই), জাতীয় চক্ষুসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মশালা বা সেমিনার, তথ্য ব্যবস্থাপনা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন, গবেষণা, ক্রয়, মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, যক্ষ্মা-কুষ্ঠ ও এইডস এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষাসেবা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অপারেশন প্ল্যানের আর দরকার নাই। অপারেশন প্ল্যানের সঙ্গে কিছু জরুরি সার্ভিস আছে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের বেতন ভাতা, মেডিসিন, কিছু টিকা কেনা- এসবের জন্য বরাদ্দ রেখে বাকিগুলো সুচিন্তিত করা উচিত। অপারেশনাল প্ল্যান তো আমরা ২৫ বছর চালালাম খুব বেশি লাভ হলো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ম্যালেরিয়া, কালাজ্বরসহ যেসব কার্যক্রম অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে চলছে সেগুলো রেগুলার প্রোগ্রামে চালাবে। রেগুলার কার্যক্রম চলবে, রাজস্ব থেকে বাজেট যাবে। অপারেশন প্ল্যান তো প্রতি ৫ বছর পরপর গ্যাপ হয় সেটা তো ভালো না। রেভিনিউ থেকে গেলে ফান্ডে কনটিনিউটি থাকে। স্বাস্থ্য খাতের বিভাগগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। চ্যালেঞ্জ আছে কিন্তু অপারেশনাল প্রোগ্রাম যে কাঠামোতে ছিল তার আর দরকার নাই। এই কর্মসূচি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত ভালো।’