হংকং ইস্যুতে ‘অতিমাত্রায় নাক গলানো’র অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতা, কর্মকর্তা ও এনজিও প্রধানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন এ তথ্য।
নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় মোট কতজন পড়েছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রদান করেননি জিয়াকুন। তাই এই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে কতজন আইনপ্রণেতা, কতজন কর্মকর্তা ও এনজিও প্রধান আছেন- সে সম্পর্কে আপাতত বলার সুযোগ নেই। তবে জিয়াকুন ইঙ্গিত দিয়েছেন, গত মাসে যে ছয়জন চীনা এবং হংকং কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন, তার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেইজিং। ‘হংকং সম্পর্কিত ইস্যুতে যে কোনো ভুল পদক্ষেপের জবাবে সবসময় যুক্তরাষ্ট্র এমন দৃঢ় ও পাল্টা পদক্ষেপ দেখবে,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন জিয়াকুন। প্রসঙ্গত, তাইওয়ান, হংকং এবং অর্থনীতি- এ তিন ইস্যুতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের পারস্পরিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গত বেশ কয়েক বছর ধরে তিক্ত থেকে তিক্ততর হচ্ছে। বেইজিংয়ের অভিযোগ- তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের বক্তব্য- তাইওয়ান-হংকংয়ে নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে চীন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের প্রতি বরাবরই বৈরী। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, চীনের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার থেকে এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। পরে তদন্তে অবশ্য এ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করে দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সব ধরনের চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও সব মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্প আরোপ করেছে।
চুক্তি নিয়ে চীনের সতর্কতা : দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ববাজার। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করল চীন। বৈশ্বিক পরাশক্তি এশীয় দেশটি বলেছে, কোনো দেশ যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনো বাণিজ্যচুক্তিতে না যায় যা চীনের স্বার্থের ক্ষতি করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ যখন নতুন মাত্রা নিচ্ছে, তখনই এমন বক্তব্য দিল বেইজিং। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ‘চীন বিশ্বাস করে সব দেশই সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে পারে। কিন্তু কেউ যদি চীনের ক্ষতি করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে, তাহলে আমরা দৃঢ়ভাবে তার বিরোধিতা করব।’ তিনি আরও বলেন, যদি কোনো দেশ এমন পদক্ষেপ নেয়, চীন তখন ‘সঠিক এবং সমুচিত প্রতিক্রিয়া’ জানাবে। চীনের কাছ থেকে এ হুঁশিয়ারি এসেছে এমন একসময় যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চেষ্টা করছে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্কছাড় বা ছাড়পত্র চাইছে, তাদের যেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করতে চাপ দেওয়া হয়। চীনের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ‘সমতা’র অজুহাতে একতরফাভাবে সব দেশের ওপর শুল্ক চাপিয়েছে এবং এখন সেসব দেশকে বাধ্য করছে তথাকথিত ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আলোচনায় অংশ নিতে। চীন বলেছে, তারা নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় এবং যথেষ্ট সক্ষম। সেই সঙ্গে বেইজিং চায় অন্য দেশগুলোর সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি শুল্ক নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। জাপান যেখানে সয়াবিন ও চালের আমদানি বাড়ানোর কথা ভাবছে, সেখানে ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি বাড়িয়ে অন্য দেশ থেকে পণ্য কেনা কমানোর পরিকল্পনা করছে। ট্রাম্প ২ এপ্রিল বহু দেশের ওপর আরোপ করা ঐতিহাসিক শুল্কের ঘোষণা স্থগিত করলেও, চীনের ওপর সেই শুল্ক বহাল রেখেছেন।-রয়টার্স, সিএনএন
চীনকেই মূল লক্ষ করে সবচেয়ে বড় কর আরোপ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ সফর করেছেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার এবং অংশীদার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার করা। -রয়টার্স, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান
-রয়টার্স