মাত্র ২৪ সপ্তাহে জন্ম নিয়েছিল শিশুটি, ওজন ছিল মাত্র ৬৪০ গ্রাম। নির্ধারিত সময়ের ১৬ সপ্তাহ আগে জন্মানো সেই শিশুটিই মিরাকল ঘটিয়েছে। ৯০ দিনের কঠিন লড়াই শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে ভারতের শিশুটি। অনেকেই একে দেখছেন মিরাকল হিসেবে। দিল্লীর ফোর্টিস হাসপাতাল, বসন্ত কুঞ্জের চিকিৎসকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই মাইক্রো প্রিমির্যাকল সম্ভব হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এটা বড় বিস্ময়।
পূর্ণ গর্ভাবস্থার সাধারণত ৩৯-৪০ সপ্তাহের তুলনায় অনেক আগে জন্ম নেওয়া এই শিশুটির বাঁচার সম্ভাবনা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। জন্মাবার সময় শিশুটির কাঁদেনি, হৃদস্পন্দন ছিল উদ্বেগজনকভাবে কম।
ফোর্টিস বসন্ত কুঞ্জের চিকিৎসকরা জানান, এতো কম সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। শিশুটি জন্মের পর থেকেই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়। তার ফুসফুস ও কিডনি ছিল সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি ছিল, ছিল সংক্রমণ ও হৃদযন্ত্রের অস্থিরতা। প্রথম সপ্তাহে শিশুটির ওজন আরও কমে মাত্র ৫৫০ গ্রামে নেমে আসে, যা পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক করে তোলে।
শিশুটির ফুসফুস এতটাই অপরিণত ছিল যে সে নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছিল না। তাকে দীর্ঘ ও উন্নত ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখতে হয়, পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করা হয়। অপরিণত কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছিল না, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তোলে। তবে নিওনেটাল টিমের নিরলস মনোযোগ, নিখুঁত পরিচর্যা এবং বিশেষ চিকিৎসা প্রোটোকলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।
ফোর্টিস হাসপাতাল, বসন্ত কুঞ্জের পেডিয়াট্রিক্স ও নিওনাটোলজি বিভাগের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর ও প্রধান ডা. রাহুল নাগপাল বলেন, ২৪ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ১০-১৫ শতাংশ, যার অর্থ প্রতি ৩টি প্রিম্যাচিউর শিশুর মধ্যে কেবল একটি বাঁচে। দিনরাত পরিচর্যা, সতর্ক ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট এবং কঠোর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণ, যা এই ধরনের ছোট শিশুদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক, তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের কাছে প্রতি গ্রাম ওজন বৃদ্ধিই ছিল এক একটি মাইলফলক, আর তাকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি যেতে দেখা আমাদের জন্য গর্বের মুহূর্ত।
হাসপাতালের নিওনাটোলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শ্রদ্ধা যোশী জানান, শিশুটি তার প্রতিটি জটিলতার সাথে সফলভাবে লড়াই করেছে। তিনি বিশেষ করে নার্সিং কর্মীদের অবিচল নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। ৯০ দিন নিওনেটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) কাটানোর পর, শিশুটিকে ১.৮ কিলোগ্রাম ওজন নিয়ে ডিসচার্জ করা হয়। বর্তমানে ছয় মাস বয়সে তার ওজন ৬ কিলোগ্রাম এবং তার দৃষ্টি, শ্রবণ এবং মস্তিষ্কের স্ক্যান রিপোর্ট সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক।
সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল