আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও দীপাবলির পরের দিন সকালে বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে গেল ভারতের রাজধানী দিল্লি। সোমবার রাতভর বাজি পোড়ানোর ফলে বাতাসের গুণগতমান সূচক বা একিউআই বিপজ্জনকভাবে বেড়ে অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দিল্লিতে গড় একিউআই ছিল ৩৬০, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে একিউআই খারাপ এবং ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকলে তা অত্যন্ত খারাপ হিসাবে বিবেচিত হয়। ৪০০-এর বেশি হলে পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত ২৪ ঘণ্টার পিএম ২.৫ সুরক্ষার মাত্রা ১৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার হলেও দিল্লির কয়েকটি এলাকায় দূষণের মাত্রা তার চেয়ে প্রায় ২৪ গুণ বেশি।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে ২০২০ সাল থেকে বাজি নিষিদ্ধ ছিল। তবে, গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট শর্তসাপেক্ষে সেই নিষেধাজ্ঞায় শিথিল করে। কেবল ‘সবুজ বাজি’ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই বাজি ঐতিহ্যবাহী বাজির তুলনায় ২০-৩০ শতাংশ কম দূষণ সৃষ্টি করে বলে দাবি করা হয়। আদালত দীপাবলির দিন সকালে এক ঘণ্টা ও সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা করে সীমিত সময়ের জন্য বাজি পোড়ানোর সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল।
কিন্তু অভিযোগ, দিল্লি এবং এর পার্শ্ববর্তী নয়ডা, গুরুগ্রামের মতো শহরতলীতে সোমবার রাতে বহু মানুষ আদালতের সেই নির্দেশ অমান্য করে গভীর রাত পর্যন্ত বাজি ফাটান। অনেক দোকানে প্রকাশ্যে সাধারণ বাজি বিক্রি হতেও দেখা গেছে।
নয়ডার এক বাসিন্দা মঙ্গলবার ভোরে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, চারিদিকে পোড়া গন্ধ। বাতাসে ধোঁয়া আর ছাইয়ের কণা। দৃশ্যমানতা এতই কম ছিল যে দূরের উঁচু ভবনগুলো ধোঁয়াশার ঘন আস্তরণে ঢাকা পড়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজির ধোঁয়াশা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। তবে দিল্লির এই দূষণের সমস্যা নতুন নয়। এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রতি বছর শীতের শুরুতে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে কৃষকদের ফসল পোড়ানোর ফলে তৈরি হওয়া ধোঁয়া এই দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। যানবাহনের ধোঁয়া। শীতকালে বাতাসের গতি কমে যাওয়ায় দূষণকারী কণাগুলি নিচের বায়ুমণ্ডলে আটকে যায়, যার ফলে ধোঁয়াশা আরও ঘন হয়।
দীপাবলির আগেই গত এক সপ্তাহ ধরে দিল্লির একিউআই ৩০০ অতিক্রম করে অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ইতিমধ্যেই গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের পরবর্তী স্তর কার্যকর করেছে। এর আওতায় ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার, কয়লা ও কাঠ পোড়ানো এবং কিছু নির্মাণ কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাজি ব্যবহারের নিয়ম শিথিল করায় দূষণের বিপদ সম্পর্কে গত কয়েক বছরে তৈরি হওয়া সচেতনতা কমে যেতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল