নিউইয়র্ক সিটির চারশ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম ডেমক্র্যাটিক পার্টির একজন মুসলমান মেয়র প্রার্থী হবার সুযোগ পেলেন। ২৪ জুন, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে জোহরান মামদানি (৩৩) বিপুল ভোটের ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছেন নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমোকে।
জোহরান মামদানি দু’বছর আগে ডেমক্র্যাটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান হিসেবে জয়ী হয়েও স্টেট পার্লামেন্টে প্রথম মুসলমান সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে বিজয়ের পথে এগিয়ে গেলেন।
এই সিটির রেজিস্টার্ড ভোটারের ৭০% ডেমক্র্যাট হওয়ায় মূল নির্বাচনেও জোহরানের বিজয় প্রায় নিশ্চিত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর আগে এই সিটি কাউন্সিলে প্রথম মুসলমান কাউন্সিলওম্যান হিসেবে ২০২২ সালে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান শাহানা হানিফ (৩৪) ইতিহাস গড়েছেন এবং এবারের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে তিনিও বিপুল ভোটের ব্যবধানে সিটির ৩৯তম ডিস্ট্রিক্ট থেকে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশি আমেরিকানসহ গোটা মুসলিম কম্যুনিটিতে আনন্দের বন্যা বইছে। জ্যাকসন হাইটস, লং আইল্যান্ড সিটি, ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার এবং জ্যামাইকার হিলসাইড এলাকায় বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছেন প্রবাসীরা। তারা সবাই ৪ নভেম্বর মূল নির্বাচন পর্যন্ত বিজয়ের এই ধারাকে আরও জোরদারের সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বি হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র এরিক এডামস। এরিক এডামস হচ্ছেন ডেমক্র্যাট। কিন্তু ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছিল। আর এসব মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থক হয়েছেন এবং সুফল হিসেবে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে ট্রাম্পের নির্দেশে। এর ফলে ডেমক্র্যাটরা তাকে বর্জনের হুমকি দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির একজন প্রার্থী। ডেমক্র্যাটরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে জোহরানের বিজয় কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন।
এদিকে, নিউইয়র্ক সিটিতে রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে দুই লাখের বেশী হলেন মুসলমান। এই মুসলমান ভোটারের ৯০ শতাংশ যদি ভোট দেয় তাহলেও যোহরানের বিজয় নিয়ে কোন সংশয় থাকবে না বলে সবার ধারণা।
অন্যদিকে, ২৪ জুন ভোটের দিন নিউইয়র্কের তাপমাত্রা ছিল ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং এটি ছিল গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমন তাপদাহ উপেক্ষা করেই অনেক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে যোহরানকে ভোট দিয়েছেন। বোর্ড অব ইলেকশনের তথ্য অনুযায়ী মেয়র পদে যোহরান মামদানি পেয়েছেন ৪,০৮,৬১৭ ভোট। তার নিকটতম এ্যান্ড্রু ক্যুমো পেয়েছেন ৩,৩৯,৪৪১ ভোট এবং ১,০৭,৩০২ ভোট পেয়ে তৃতীয় শীর্ষে রয়েছেন ব্র্যাড লেন্ডার।
জোহরানের এ বিজয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ। আগামীতে মুসলিম আমেরিকান এবং অভিবাসী সমাজের সামগ্রিক কল্যাণে নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন জোর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলে নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ