হুমকি দিয়ে কোনও বাণিজ্য চুক্তি করা যাবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ)।
২৭ সদস্যের সংস্থাটির বাণিজ্য প্রধান মারোস সেফকোভিচ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তবে তার ভিত্তি হবে ‘সম্মান’, ‘হুমকি’ নয়।”
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর সংস্থাটির দিক থেকে এই হুঁশিয়ার দেওয়া হলো।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে একটি ফোনালাপের পর ইইউ বাণিজ্য প্রধান বলেন, “ইইউ উভয়ের জন্য কার্যকর একটি চুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইইউ-মার্কিন বাণিজ্য হুমকির মাধ্যমে নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রস্তুত।”
এর আগে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনার ধীরগতিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার পরিকল্পনা হলো ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সকল পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক ১ জুন থেকেই কার্যকর করা।
সামাজিক মাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথে ট্রাম্প লিখেছেন, “তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা কোনও দিকে অগ্রসর হচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বা উৎপাদিত পণ্যের ওপর কোনও শুল্ক আরোপ করা হবে না।
গত মাসে ট্রাম্প ইইউ পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু আলোচনার জন্য সময় দেওয়ার জন্য ৮ জুলাই পর্যন্ত তা অর্ধেক করে ১০ শতাংশ বহাল রাখেন।
শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কোনও চুক্তির সন্ধান করছি না- আমরা চুক্তিটি তৈরি করেছি।”
এরপর তিনি বলেন, ইউরোপের কোনও কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ হলে তিনি এ নিয়ে বিলম্ব করতে রাজি আছেন।
ইইউ ওয়াশিংটনের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মার্কিন সরকারের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছর ৬০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে এবং ৩৭০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য কিনেছে।
ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, উচ্চতর শুল্ক উভয়পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর হবে।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেছেন, “আমাদের এই পথে যাওয়া উচিত হবে না। আলোচনাই সর্বোত্তম ও একমাত্র টেকসই পথ।”
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট সেন্ট-মার্টিন বলেছেন, “আমরা একই নীতি বজায় রাখছি- উত্তেজনা কমানো, কিন্তু আমরা জবাব দিতেও প্রস্তুত আছি।”
জার্মানির অর্থনীতিমন্ত্রী ক্যাথেরিনা রেইচ বলেছেন, “ইউরোপীয় কমিশন যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই সবকিছু করতে হবে।”
ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ সাংবাদিকদের বলেছেন, বাণিজ্য আলোচনায় ইইউ যে কৌশল নিয়েছে তাকে তিনি সমর্থন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগেও আমরা শুল্ক কমতে ও বাড়তে দেখেছি।”
ট্রাম্পের অভিযোগ হলো ইউরোপ অসম বাণিজ্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায় কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে।
তিনি বলেন, এই বাণিজ্য ঘাটতি আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য অন্যায্য। বিশেষ করে তিনি গাড়ি ও কৃষিপণ্যের বিষয়ে থাকা নীতিগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পের হুমকির পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ