যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে দেশটির পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব রয়েছে। তবে তেহরান জানিয়েছে, তারা এখনো ট্রাম্পের কাছ থেকে কোনো চিঠি পায়নি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে ইরানের দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেন, "আমরা এখনো এমন কোনো চিঠি পাইনি।" ট্রাম্পের দাবির একদিন পর ইরান তার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাল। তবে খামেনির দপ্তর এখনো নিশ্চিত করেনি যে তারা চিঠি পেয়েছে কি না।
ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে কোনো আলোচনায় যাবে না। তিনি বলেন, "যত দিন তারা আমাদের ওপর সর্বোচ্চ চাপ ও হুমকি বজায় রাখবে, তত দিন আমরা আলোচনায় বসব না।"
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দেশটির তেল খাতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কৌশলকে ট্রাম্প প্রশাসন 'সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ' নীতি বলে উল্লেখ করেছে।
এই চিঠির বিষয়ে ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ খামেনি কী প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। এর আগে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তির আলোচনার আগে খামেনিকে গোপন চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
গত আগস্টে এক ভাষণে খামেনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় কোনো ক্ষতি নেই। তবে, ইরানের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নির্বাচনের আগে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প কেন চিঠি পাঠালেন?
ট্রাম্পের এই চিঠির দাবি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একযোগে ঘোষণা করেছে যে, তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না। এতে সামরিক উত্তেজনার আশঙ্কা বেড়েছে, কারণ তেহরান এখন প্রায় অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, "আমি ইরানকে চিঠি লিখেছি। বলেছি, আলোচনা করো, কারণ যদি সামরিক পদক্ষেপ নিতে হয়, তাহলে সেটি ভয়ংকর হবে।"
ইরান কি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে?
ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করেনি, তবে তারা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য সহায়ক হতে পারে।
হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কোনোভাবেই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেবে না। তবে গত মাসে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, ইরান অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের কাছাকাছি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন আরও বাড়িয়েছে।
সোর্স: আল-জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক