মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিতে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বাংলাদেশের। কিছু সম্ভাবনা তৈরি হলেও চলমান বিভিন্ন অস্থিতিশীলতার কারণে সেটা কতটা কাজে লাগানো যাবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্লেষকদের মধ্যে। তাই ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি নিয়ে উচ্ছ্বসিত না হয়ে রপ্তানিপণ্যের মান উন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই বৈশ্বিক বাণিজ্যে আধিপাত্য বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক আরোপ করবে তাদের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর মূল উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্র মূলত ফার্স্ট বাণিজ্যনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন পণ্যের প্রসার ঘটানো। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব নীতিই হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে। সেখানে বাংলাদেশ খুব একটা ভূমিকায় থাকবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্পের বাণিজ্য সুবিধার সুযোগ আমরা অটোমেটিক্যালি পাব না। পণ্যের মান বজায় রেখে, অন্যান্য শর্ত সঠিক সময়ে সঠিকভাবে হালনাগাদ করে সঠিক পণ্য উৎপাদন করে বাজারটাকে ধরতে হবে।
ক্ষমতায় বসার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় মেক্সিকো এবং কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নতুন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে ভারত ও চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর চীনও বসে নেই। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রতিযোগিতায় একদিকে যেমন অনিশ্চয়তা পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্য, সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন সুযোগও। চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বাণিজ্য কমতে পারে। ফলে সুযোগ তৈরি হতে পারে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে সহজেই বলা যায় না আমরা সুবিধা পাব বা পেয়েছি। কিছুদিন পর যদি মনে করেন দরকার নেই, তাহলে ট্রাম্প সেটা প্রত্যাহার করে নেবেন। তবে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে যদি আমাদের কোনো সুবিধা হয়, সেটা ভালো, কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমরা যাতে শুল্ক আরোপের শিকার না হই, সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন সুযোগ নিতে যাব, তারাও সুযোগ নিতে আসবে। সুতরাং যাদের পণ্যের মান ভালো থাকবে, তারাই সুযোগটা নিতে পারবে। তাই আমাদের উচিত হবে পণ্যের মান উন্নয়ন করা। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয় ২০১৮ সালে। যার ফলে ওই সময়ে চীন থেকে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৯৩ কোটি ডলারের পণ্য। সেটা ছিল আগের সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।