বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না পাওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র উপস্থাপন করতে পারেনি বা প্রয়োজনীয় প্রভিশন পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি খেলাপি ঋণের নীতিমালা কঠোর করেছে এবং বেনামে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করেছে। ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের শেষে এসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা ও আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পরিচালনা পর্ষদের সভা ডাকলেও প্রয়োজনীয় ‘অনাপত্তি সনদ’ না পাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে ব্যাংকগুলোর ওই অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়নি এবং তারা ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারছে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকগুলোর আয়, ব্যয় ও লভ্যাংশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানান কর্মকর্তারা।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে না পারা ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে এসব ব্যাংকের নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায়নি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে না পারা, প্রকৃত খেলাপির কিছু চিত্র না দেখানোর কারণে শেষ মুহূর্তে এই ১৯ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুমোদন পায়নি।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি লভ্যাংশ ঘোষণার। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হলেও ১৯টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশে ব্যাপক সংস্কারের কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার, যার জের ধরে দেশের ব্যাংক খাতসহ কয়েকটি খাতে উন্নতি দৃশ্যমান। কিন্তু এখনো পুঁজিবাজারে সংস্কারের কোনো প্রভাব নেই। তাই আস্থার সংকট কাটেনি। এখন আস্থা ফেরানোর বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে মুখ্য। পুঁজিবাজার যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের পদক্ষেপ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঢাকা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশের সাত মাস পার হয়ে যাওয়ায় এখন এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে একটি বড় তথ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও লভ্যাংশ ঘোষণা করার চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল ৩০ এপ্রিল। এই সময়সীমাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ দিনে ৩৬টি ব্যাংকের বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হলেও, অনেক মিটিং শেষ হয়েছে গভীর রাতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ঘোষণা করেছে, তারা এই বছরও কোনো লভ্যাংশ দেবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ ’২৫) এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও অনুমোদন করতে প্রথমে ২৮ এপ্রিল পর্ষদ সভা ডেকেছিল। সেদিন এনওসি না পেয়ে আবার ৩০ এপ্রিল সভা ডাকে ব্যাংকটি। তবে সেদিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাংলাদেশে ব্যাংকের এনওসি না পাওয়ায় পর্ষদ সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ডাচ্বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী, ট্রাস্ট ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এর মধ্যে ১০ ব্যাংকের মুনাফা কমেছে ও ৫ ব্যাংকের বেড়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি একটি ব্যাংক।