বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে তিনটি প্যানেল (ফোরাম, সম্মিলিত পরিষদ ও ঐক্য পরিষদ) থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯৩ জন ব্যবসায়ী। এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন সাবেক সভাপতির পাশাপাশি প্রার্থী হয়েছেন একাধিক নবীন প্রার্থী। তারা প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দেন ‘সম্মিলিত পরিষদ’, ও ‘সম্মিলিত ফোরাম’ প্রার্থীরা। তার দুই দিন আগে বিজিএমইএর দপ্তরে ঐক্য পরিষদের ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চৈতী গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম। অন্যদিকে ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু। দুই প্যানেল লিডারের মধ্য থেকেই একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। ফোরামের সঙ্গে রয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা ও আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ)। এই প্যানেলে নবীন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আসিফ কামাল পাশা, শাহ রাঈদ চৌধুরী, সামিহা আজিম, মাহির মান্নানসহ আরও কয়েকজন। অন্যদিকে সম্মিলিত পরিষদে আছেন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান ও কাজী মনিরুজ্জামান। পরিষদ থেকে নবীন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন লিথি মুনতাহা মহিউদ্দিন, মির্জা ফাইয়াজ হোসেন, মনজুরুল ফয়সাল হক প্রমুখ। নবীন প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী হিসেবে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা। প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন এদের অনেকেই।
জানা গেছে, সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠনের বিষয়ে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৪ মে ঢাকার একটি হোটেলে আলোচনায় বসে উভয়পক্ষ। তবে দীর্ঘ বৈঠকের এক পর্যায়ে ফোরামের নেতারা নির্বাচন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। কারণ বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের আধিপত্য দীর্ঘদিনের। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর দুই প্যানেলের পক্ষ থেকে বিজিএমইএকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রথমবারের মতো ঐক্য পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও লড়াই হবে পুরোনো দুই জোটেই।
এ বিষয়ে ফোরামের প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসা রয়েছে এমন উদ্যোক্তা, দক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও তারুণ্য আর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দূরদর্শিতা বিবেচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রার্থীরা পর্ষদে এলে তাঁদের হাতে আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, ‘১ শতাংশের কম কারখানার কর্মকাণ্ডের জন্য পুরো শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সে জন্য আমরা নির্বাচিত হলে বাধ্যতামূলক সঞ্চয় তহবিল করব। বিশেষ সাধারণ সভা করে সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কাজ করতে চাই।’
সম্মিলিত পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের পাশাপাশি কারখানা মালিকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলার ওপর জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়াও পোশাক খাতকে একটি টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে সম্মিলিত পরিষদ স্বচ্ছতা, ঐক্য এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিজিএমইএ সভাপতি আবদুল মান্নান কচি বিদেশে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে সমঝোতার ভিত্তিতে সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়। এতেও ফোরামের আপত্তি থাকায় পর্ষদ ভেঙে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে মোট ৯৩ প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে একযোগে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৩১ মে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১ হাজার ৮০৬ জন। নির্বাচিত ৩৫ পরিচালকের মধ্য থেকে পরবর্তী সময়ে একজন সভাপতি ও সাত সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন। অন্যরা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকবেন।