ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যবসায়িক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আইবিএ তার মানসম্মত শিক্ষা এবং কঠোর ভর্তি পরীক্ষার জন্য সুপরিচিত। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এখানে বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), এমবিএ (মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), এক্সিকিউটিভ এমবিএ, ডিবিএ (ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রোগ্রামসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক ডিগ্রি ও কোর্স করানো হয়। যেখানে পাঠদানের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় নর্থ আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড।
দেশের প্রথম কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পেয়েছে সাউথ এশিয়ান কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স সিস্টেম (এসএকিউএস) স্বীকৃতি। অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউশনস ইন সাউথ এশিয়া (এএমডিআইএসএ) কর্তৃক প্রদত্ত এ স্বীকৃতি আইবিএর মান, সক্ষমতা, শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা প্রমাণ করে। তবে আইবিএর এ কোর্সগুলোতে পড়াশোনার জন্য দিতে হয় এক অগ্নিপরীক্ষা। বাংলাদেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চাকরির পরীক্ষার চেয়েও মুশকিল হয় আইবিএর ভর্তি পরীক্ষাগুলো। ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া থেকে কোর্স সম্পন্ন করা পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যেতে হয় এক কঠোর নিয়মের মধ্য দিয়ে। পড়াশোনা ও বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক কাজের চাপ নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাক্রমের অনুসরণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হয়ে ওঠে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে। ফলে ক্যারিয়ারে তারা এগিয়ে থাকে অন্যদের চেয়ে বেশি।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এ মোমেন জানান, আইবিএতে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি/বিখ্যাত ব্যক্তিরা অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতে আসেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বইয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি বাইরের বিষয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পান। শিক্ষকরা নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট কারিকুলাম অনুসরণ করে ক্লাস নেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব অতিথি শিক্ষক আসেন, তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে ক্লাস নেন। তাঁরা নিজেদের জীবনের কথা বলেন। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয়ে জ্ঞানলাভের সুযোগ পান। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে বেশি কাজে লাগে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় সব খাতে অবদান রেখে দেশ গড়তে কাজ করছেন আইবিএর শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে দেশের ২৩টিরও অধিক ব্যাংকের এমডি আইবিএর শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও পুলিশে অনেকে কর্মরত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব এখানকার ছাত্র। অনেক প্রতিষ্ঠানে সিইও পদে দায়িত্ব পালন করছেন এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা। আইবিএ থেকে পাস করে অনেকে সফল উদ্যোক্তাও হয়েছেন। বড় প্রতিষ্ঠান তৈরির পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশীয় মুঠোফোন ব্র্যান্ড সিম্ফনির কর্ণধার, বিডিজবসের কর্ণধার, শপআপ ও টেন মিনিটস স্কুলের উদ্যোক্তারা আইবিএর শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ও ব্লুমিংটনের সহযোগিতা ও ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করে। তবে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ১৯৭০-এ এমফিল ও পিএইচডি, ১৯৯৩-এ বিবিএ এবং ২০০৭-এ এক্সিকিউটিভ এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪৮০ জন স্নাতক এবং ২০০ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন।
এ প্রতিষ্ঠানের নামজাদা শিক্ষকদের মধ্যে আছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ মোজাফফর আহমেদ, শিক্ষাজীবী ও সংগীতজ্ঞ ইমরান রহমান, শিক্ষাবিদ সলিমুল্লাহ খান, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজ জিএ সিদ্দিকী প্রমুখ। এ ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছেন সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান রহমান খান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক প্রমুখ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদান ছাড়াও বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠানটি কিছু বিশেষ কেন্দ্র তৈরি করেছে যেমন ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশনস সেন্টার (সিএমআরপি), আইবিএ কম্পিউটার সেন্টার (আইবিএসিসি), উন্নয়ন ও নীতি গবেষণা কেন্দ্র (ডিপিআরসি), মহিলা শিক্ষা কেন্দ্র (সিডব্লিউএস), উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বিকাশ কেন্দ্র (সিইএসবিডি), আইবিএ কেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আইসিডিসি), জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা কেন্দ্র (সিপিএমআর) এবং আইবিএ পরিবেশ উন্নয়ন কেন্দ্র (আইইডিসি)। আইবিএ অনুষদের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত চেয়ারপারসন প্রতিটি কেন্দ্রের নেতৃত্বে থাকেন। দেশের উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও ব্যবসায় শিক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণায় এ প্রতিষ্ঠানটির অবদান অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।