বেলা ১টা। মিরপুর স্টেডিয়ামের আকাশে কুয়াশায় ঢাকা শীতের সূর্য। তাপ খুব বেশি নেই। গা সয়ে যাওয়া যাকে বলে! সে সময় স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি মুশফিকুর রহিমকে ঘিরে আছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা। কোনো সংবাদ সম্মেলন নয়, ভালোবাসার বন্ধন। বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আজ ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট খেলতে নামবেন। এই বিরল কীর্তির সাক্ষী সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের ২০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের হাজারো স্মৃতি শেয়ার করেছেন। ছবি তুলেছেন। হেসেছেন। হাসিয়েছেন। সাংবাদিকদের মধ্যমণি হয়ে ছবি তুলে স্মৃতির ফ্রেমে রেখে দিয়েছেন। সাংবাদিকরাও সাক্ষী হয়ে ছবিগুলোকে রাখবেন মনের গহিনে। এ এক বিরল মুহূর্ত।
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড আজ দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামবে মিরপুরে। সিলেটে ইনিংস ও ৪৭ রানে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেছে নাজমুল বাহিনী। অ্যান্ডি বালবার্নির আইরিশ বাহিনীকে হোয়াইটওয়াশ করতে মিরপুরের টেস্ট জেতা খুবই জরুরি। টাইগার অধিনায়কসহ পুরো দল মনেপ্রাণে চাইছেন মুশফিকের জন্য জিততে। সিলেট টেস্ট চলাকালীন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই একটি দল হয়ে মুশফিক ভাইয়ের ১০০তম টেস্ট উদ্যাপন করব।’ শুধু ক্রিকেটাররা নন, বিসিবিও মুশফিককে বিশেষভাবে সংবর্ধনা দেবে। এক সময়কার সতীর্থ তামিম ইকবাল প্রশংসায় ভাসিয়ে প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেছেন, ‘তোকে নিয়ে বলার আছে অনেক কিছু। আজকের দিনের জন্য শুধু একটিই কথা, বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার মাইলফলক তোর চেয়ে বেশি আর কেউ ডিজার্ভ করে না। আশা করি, ভবিষ্যতে এ অর্জনে তোর পাশে নাম লেখাবে আরও অনেকেই। কিন্তু তুই প্রথম। এটা তোরই প্রাপ্য।’
২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক। অভিষেক টেস্টে আলো ছড়াতে পারেননি ১৮ বছরের তরুণ। তবে ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার ইঙ্গিত রেখেছিলেন। সেই শুরু। এরপর পথচলায় ২০ বছর পাড়ি দিয়ে আজ ১০০তম টেস্ট খেলতে নামবেন। শততম টেস্ট খেলছেন দুই দশকের কঠোর পরিশ্রম, ফিটনেস এবং সর্বোপরি ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ থেকে।
টাইগার হেড কোচ ফিল সিমন্স মনে করেন শতভাগ পেশাদারি মনোভাবের জন্যই ১০০ টেস্ট খেলছেন মুশফিক, ‘আমাদের সবার আগে তার পেশাদারিত্ব, দীর্ঘায়ুু এবং বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার তার আকাক্সক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কারণ ১০০ টেস্ট ম্যাচ পেতে বাংলাদেশকে অনেক সময় দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ বছরে ১৫টিও টেস্ট খেলে না। তার জন্য কিছুটা সময় লেগেছে এবং এটি আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে। তার সঙ্গে অল্প সময় কাজ করে তার পেশাদারিত্ব নিয়ে বুঝতে পেরেছি। আগামীকাল (আজ) তার যখন শততম টেস্ট খেলার সুযোগ আসবে তখন আমি খুব খুশি হব।’
১৪৮ বছরের টেস্ট ক্রিকেটে ২৬০০-এর ওপরে টেস্ট খেলা হয়েছে। বাংলাদেশ খেলবে ১৫৬ নম্বর টেস্ট। মুশফিক খেলবেন ১০০তম টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে মুশফিকের আগে ৮৩ ক্রিকেটার ১০০ বা তার ওপরে টেস্ট খেলেছেন। ভারতের শচীন টেন্ডুলকার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলেছেন। মুশফিক এখন পর্যন্ত ৯৯ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮২ ইনিংসে ৩৮.০২ গড়ে ৬৩৫১ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১২টি ও হাফ সেঞ্চুরি ২৭টি। ডাকব সেঞ্চুরি ৩টি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিও করেন। ২০১৩ সালে গলে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রান করেছিলেন। ২১৯* ও ২০৩* অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস দুটি আবার খেলেছেন মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।