মসজিদকে সামনে রেখে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে কওমি ও তরিকতপন্থি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত মতাদর্শীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২ শতাধিক অনুসারী আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। বর্তমানে এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক থাকলেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে প্রতি বছরের মতো আমরা এবারও সতর্ক অবস্থানে ছিলাম। সারা দিন সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পরে ১৪৪ ধারা জারি করি। ভোর ৫টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল টিম মাঠে ছিল। আমরা সবাইকে বুঝিয়েছি। রাতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টির যেন শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি।’ ‘আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদাসার মহাপরিচালক মুফতি খলিল আহমেদ কাসেমী অভিযোগ করেন, কথিত সুন্নি নামধারীরা পরিকল্পিতভাবে মাদরাসার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কটূক্তি ও অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি করেছে। আল্লামা আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কবরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তারা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট করেছে। তাদের হামলায় মাদরাসার শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে।’ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের হাটহাজারী উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সেকান্দার মিয়াও অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সকালে জুলুসে যাওয়ার পথে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা গাড়িবহরে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। গাড়িবহর লক্ষ্য করে গরম পানি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এর প্রতিক্রিয়া দেখায় নবীপ্রেমিকরা। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের হামলায় শতাধিক সুন্নি সমর্থক আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুসে যাওয়ার গাড়িরবহর থেকে আরিয়ান ইব্রাহিম নামে এক যুবক ‘আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মসজিদকে সামনে রেখে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিকালের মধ্যেই এ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও কওমি সমাজের লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়। পরে আরিয়ান ইব্রাহিম নামে ওই যুবককে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। জশনে জুলুসের গাড়িবহর ফেরার পথে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হাটহাজারী বাসস্টেশন থেকে শুরু করে চারিয়া মাদরাসা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায়। কয়েক ঘণ্টার দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২ শতাধিক সমর্থক আহত হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটহাজারী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক। রবিবার জনজীবন স্বাভাবিক থাকলেও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
হেফাজতের প্রতিবাদ : হাটহাজারী মাদরাসায় হামলার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান। বিবৃতিতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চিহ্নিত উসকানিদাতা ও হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের হামলায় হাটহাজারী মাদরাসার প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন এবং অনেককে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কারা ভিকটিম তা বোঝার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া, একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট মসজিদের উদ্দেশে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও গালিগালাজ এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কটু মন্তব্য ও পাথর ছুড়ে উসকানিমূলক আচরণ কোনোভাবেই রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা হতে পারে না। আমরা এসবেরও তীব্র নিন্দা জানাই।’