সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী বর্তমান করহারকে ‘অন্যায্য’ ও ব্যবসার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করেন। এ ছাড়া সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭৯ শতাংশ ব্যবসায়ী কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবকে বড় সমস্যা ও ৭২ শতাংশ ব্যবসায়ী কর প্রশাসনে দুর্নীতি ব্যবসার জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন সম্পূর্ণ ডিজিটাল কর জমা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকাও ব্যবসার বড় চ্যালেঞ্জ। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘করপোরেট কর এবং ভ্যাট সংস্কার : এনবিআরের জন্য একটি বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক ডায়ালগে উপস্থাপিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। বক্তব্য রাখেন এনবিআর সদস্য মশিউর রহমান, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ এম মাহবুব সালেকিন, সাবেক অর্থ সচিব সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তানিম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, স্বয়ংক্রিয়পদ্ধতি বা অটোমেশন চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত- প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত ভ্যাট নিরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন, অহেতুক হয়রানি করার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কাজ হচ্ছে। এনবিআর চেয়ারম্যান ন্যূনতম করকে কালাকানুন উল্লেখ করে বলেন, কোনো সন্দেহ নেই ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন। এটা স্বীকার করতেই হবে। বিজনেসে কর হবে মুনাফার ওপর। তা না করে মিনিমাম কর নির্ধারণ করছি। সমস্যা হচ্ছে এগুলো ঠিক করতে গেলে আমাদের কর আহরণ কমে যাবে। এ সময় কর জিডিপি অনুপাত ক্রমান্বয়ে কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা খুবই আশঙ্কাজনক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার দলের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল- তারা বললেন, পাকিস্তানের কর জিডিপি অনুপাত ১২.২। আর আমরা আমাদের গত বছর ছিল ৭.৪। এ বছর আরও কমে গেছে। ৬.৬ হয়ে গেছে। এটা দিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ ও দেশের উন্নয়ন করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের।
সাবেক অর্থ সচিব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রবন্ধে ৬১টি সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যক্তির অনলাইন রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর্পোরেটের ক্ষেত্রে দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। শিক্ষা ও শিক্ষার ব্যবসা আলাদা করে করের চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। ট্যাক্স বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ মাহবুব সালেকিন বলেন, কর অফিসে দুর্নীতি একটু বেশি। যদি আমাদের মামলাগুলো দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সমাধান করা যেত তাহলে রাজস্ব আহরণ বেশি হতো। তাহলে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভর করা লাগত না।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ সমীক্ষা পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী নিয়মিত কর দাবিকে কেন্দ্র করে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, যথাযথ ব্যাখ্যা বা পূর্বাভাস ছাড়াই কর কর্মকর্তারা অনেক সময় ইচ্ছেমতো কর আরোপ করেন। এসব অনুশীলন করের অঙ্কের বাইরে গিয়ে অদৃশ্য চাপ তৈরি করে, যা ব্যবসার জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।