জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা জুলাই শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের এ জুলাই সনদ রক্তস্নাত। আমাদের রাজনীতিবিদরা এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ যাতে বৃথা না যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। রাজনীতিবিদরা যদি এর প্রতি অসম্মান করলে মাশুল দিতে হবে।’
গতকাল রাজধানীর সিরডাপের এটিএম শামসুল হক মিলনায়তনে আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সাবেক মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক মুসলিম চৌধুরী, কবি সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুল আজিজ, ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান ও ড. মির্জা হাসান, জুলাই আন্দোলনের শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সেঁজুতি প্রমুখ। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের স্বার্থকর্তা নির্ভর করবে এর বাস্তবায়নের ওপর। সনদটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এবং পরবর্তী সংসদে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এমন মনোভাব পোষণ করলে রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সংস্কারের ব্যাপারে ব্যাপক জনমত রয়েছে, যা সুজনের জনমত জরিপ থেকেও অনুধাবন করা যায়। তাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যদি শুধু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন এবং সংস্কার বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তাদের তার পরিণাম ভোগ করতে হবে।
মনির হায়দার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পলিসিতে নারী প্রতিনিধিত্ব নেই। সবচেয়ে বেশি আপত্তি এসেছে নারী আসনে। কিছু দলের আপত্তির কারণে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। অনেক ফাঁকফোকর আছে। এগুলো নিয়ে কমিশন কাজ করছে। ছয় মাসে ঐকমত্য কমিশন যা অর্জন করেছে তা হতাশাজনক কোনোভাবেই বলা যাবে না। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে খুব দ্রুত একটি জায়গায় পৌঁছানো।
তিনি বলেন, সংকটটা কেবল সনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। সংকটগুলো সমাধান হবে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝাপড়ার মধ্যে।
মুসলিম চৌধুরী বলেন, বেশকিছু বিষয় ছিল যেগুলো ঐকমত্য কমিশনে আসেনি। স্থানীয় সরকার বিষয়ে আসেনি। জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করতে গেলে সাধারণ মানুষ বুঝবে কীভাবে? আমি তো নিজেই বুঝতে পারিনি।
সোহরাব হাসান বলেন, দেশে প্রতি বছর দারিদ্র্যের হার বাড়ছে ৩ শতাংশ করে। মানুষের মৌলিক অধিকার যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে দেশে সুশাসন ফিরে আসবে না। জুলাই সনদ করতে এত সময় কেন লাগছে? জুলাই সনদকে হতে হবে আগামীতে দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে তার অঙ্গীকারনামা। সেঁজুতি বলেন, জুলাই আন্দোলনের এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও সনদ নিয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে। এটা লজ্জার বিষয়। শহীদ ও আহতদের পরিবারের সুরক্ষার বিষয়ে কিছু ভাবা হচ্ছে না। শহীদ পরিবারের লোকজনদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। থানা পুলিশও কিছু করছে না।