স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের ইতোমধ্যে চৌদ্দ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কতটা ঘটছে, তা আজ নতুনভাবে বিবেচনা করতে হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় নাগরিক জোট’ গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক জোটের লক্ষ্য ও কর্মপন্থা
নতুন এই জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন নিশ্চিতের দাবি জানায় জাতীয় নাগরিক জোট। এছাড়া, জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার করতে হবে। জাতীয় নাগরিক জোট সব শ্রেণি-মতের মানুষের ভোটাধিকার ও প্রার্থীদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বান জানাচ্ছে।
জনবান্ধব টেকসই সংস্কার
জোটটি বলছে, গত এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার নিয়ে আলোচনা হলেও আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংক্রান্ত সংস্কার উপেক্ষিত ছিল বা গুরুত্ব পায়নি। জাতীয় নাগরিক জোট একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা নির্মাণের লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত টেকসই সংস্কারের দ্রুত বাস্তবায়ন চায়।
নিবর্তনমূলক কালো আইন বাতিল
নাগরিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় নিবর্তনমূলক সব আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক জোট। নতুন এই জোটের দাবি, সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ- ২৪ বাতিল করতে করতে হবে, যা নাগরিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করছে; দণ্ডবিধির ৭৭ ধারা (বিচারক সুরক্ষার নামে অন্যায় বিচার উৎসাহিত করে) বাতিল করতে হবে; অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে, যা রাষ্ট্রীয় তথ্যের স্বচ্ছতা বাধাগ্রস্ত করে; ৫৪ ধারা-তে ‘যথাযথ সন্দেহ কীভাবে নির্ধারিত হবে’— তা স্পষ্ট করা ও অপব্যবহার রোধে সংস্কার করতে হবে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ‘কালা কানুন’ বাতিলসহ সব শ্রেণি-মতের নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিতের লড়াইয়ের পাশাপাশি গুণগত সংস্কার ও নিবর্তনমূলক কালো আইন বাতিলের লক্ষ্যে তৎপরতা চালানো হবে বলেও জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক জোট।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহি
জাতীয় নাগরিক জোটের আরও কিছু দাবি হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এছাড়া, উপদেষ্টাদের কাজের জবাবদিহি ও সম্পদের হিসাব দিতে হবে। নির্বাচনের সময় উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষ আচরণের নীতিমালা প্রকাশ করতে হবে।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক জোটের নেতৃবৃন্দ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবেন, প্রত্যেক প্রতিনিধি পাঁচজন সহ-প্রতিনিধি নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।
জোটের প্রতিনিধিরা হলেন— আমজনতা দলের সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান, আমজনতা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কুলসুম সাধনা মহল, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের সভাপতি মো. আতিকুর রহমান (রাজা), বাংলাদেশ মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মাহবুব আলম, স্নিগ্ধ বাংলাদেশের সদস্য সচিব সোনিয়া চৌধুরী, জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের আহ্বায়ক আল আমিন রাজু, জাতীয় সমাজ পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, জনতার অধিকার পার্টির (পি আর পি) তরিকুল ইসলাম ভুইয়া, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক প্রজন্মের (বিজিপি) মো. আল কাওছার মিয়াজী, গ্রিন পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মদ খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব হোসাইন, বাংলাদেশ সমাজকল্যাণ পরিষদের গিয়াস উদ্দিন খোকন, ড.কবির জুয়েল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও আগামীর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ আলম, যাত্রাবাড়ী শহীদ পরিবার প্রতিনিধি মিম আক্তার, ডি এস এ ভিক্টিম নেটওয়ার্কের ইসরাত জাহান রেলি, এবং শহীদ পরিবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠক আব্দুর রউফ।
বিডি প্রতিদিন/কেএ