দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য পৃথক ও স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে বিএনপি। পরে অন্য ইস্যুতে আলোচনা শুরু হলে সংলাপে যোগ দেয় দলটি। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনে বৈঠকের শুরুতে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির নেতারা।
দিনের শুরুতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য পৃথক ও স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব ইস্যুতে আলোচনা শুরু হয়। এসব বিষয়ে একমত না হওয়ায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে যায় বিএনপি। কমিশনের পক্ষে জানানো হয়, পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারেই বিএনপি বৈঠক বয়কট করে। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তারা আলোচনায় অংশ নেবেন না। পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে তারা আলোচনায় অনুপস্থিত থাকবে। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। এ সময় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি বড় দল আলোচনায় অংশ না নিলে ঐকমত্য পৌঁছানো সম্ভব নয়। আলোচনায় অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।
পরে সংলাপের সঞ্চালক মনির হায়দার বলেন, এর আগে এক বা একাধিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে ঐকমত্য হয়েছিল।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় আমরা ওয়াকআউট করেছি। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় আমরা অংশ নেব না বলেছি। আলোচনায় আবার যোগ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, এসব ইস্যুতে আমরা আলোচনায় অংশ নেব না সেটা বলেছি। কিন্তু আলোচনায় আবার যোগ দিয়ে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরব।
এর আগে ২৩ জুলাই রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে প্রতীকী ওয়াকআউট করে সিপিবিসহ তিন দল। ওইদিন অধিবেশন শুরুর সঙ্গে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। ১০ মিনিটের প্রতীকী ওয়াকআউটের ঘোষণা দেন তিনি। তাকে সমর্থন জানান জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন এবং বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ইস্যুতে একমত নয় দলগুলো : রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাবরক্ষকের কার্যালয় এবং ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য পৃথক ও স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো।
পূর্বের আপত্তি সত্ত্বেও এই ইস্যুতে আলোচনা শুরু হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে বিএনপি। অবশ্য পরে আলোচনায় যোগ দেন বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২০তম দিনের আলোচনা শুরু হয়। দুপুর ১টায় বৈঠকে যোগ দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ। তবে এ ইস্যুতে সারা দিন আলোচনা হলেও একমত হতে পারেনি দলগুলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ না জন্ম নিতে পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে। তিনি আরও বলেন, আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে, পরবর্তীকালে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, পিএসসি, দুদক, মহাহিসাবরক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগ সাংবিধানিকভাবে হওয়ার পক্ষে জামায়াত। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল চায় নির্বাহী বিভাগ এ নিয়োগ দেবে। তাদের আশঙ্কা এতে নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আমরা মনে করি, এ কথা সঠিক নয়। বরং এর মাধ্যমে যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ পাবে। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দলনিরপেক্ষ নিয়োগের বিষয়টি বিএনপি না মানার কারণ বোধগম্য নয়। দলটি যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় একমত, তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও সাংবিধানিকভাবে নিয়োগ হওয়ার বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রস্তাবনাগুলো বারবার পরিবর্তন করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে একমত হতে পারে এজন্য এমনটি করা হয়। আজকের বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাবরক্ষকের কার্যালয় ও ন্যায়পাল নিয়োগ এবং নারী আসনে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় অধিকাংশ দল একমত হলেও নিয়োগ কমিটির কাঠামো নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে।
আগুন আতঙ্ক : এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চলাকালে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভবনে আগুন আতঙ্ক দেখা দেয়। ফায়ার অ্যালার্ম বাজতে থাকায় দ্রুত বের হয়ে যান রাজনীতিবিদরা। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ সবাইকে বের হওয়ার জন্য বলেন। তখন সবাই হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে নিচে অবস্থান করেন। কিছুক্ষণ পর বৈঠক শুরু হলে ফায়ার অ্যালার্মের ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে কমিশন।