রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে সবুজ বেষ্টনী বা গ্রিন বেল্ট। একে ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী এক ইকোসিস্টেম। সেখানে আছে পাখিদের কলরব। সবুজ গাছের বেষ্টনী। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পাশেই মইদারা খালে ডলফিনের দল খেলায় মেতে উঠছে। সম্প্রতি এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও তার আশপাশ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে এরকম দৃশ্য দেখা গেছে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির আগে দেশের পরিবেশবিদরা বলেছিলেন, সুন্দরবনের আশপাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গোটা বনের ওপর। বাদ যাবে না আশপাশের এলাকাও। যদিও রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটই এখন পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খালের চারপাশের জমি ও খালের জলে রামপাল প্রকল্পের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এ সবুজের বেষ্টনী বা গ্রিন বেল্ট। আর গ্রিন বেল্টের সবুজে আকৃষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় উড়ে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল। এর মধ্যে আছে নানা ধরনের অতিথি পাখি। বিকাল হলেই মইদারা খালে দেখা মিলছে ডলফিনের। আপন মনে মইদারায় খেলায় মাতে এ ডলফিন। শুরুতে প্রকল্পটি গড়ে তোলার প্রস্তুতি যখন নেওয়া হচ্ছিল তখন পরিবেশবাদীরা বনের পশুপাখির ক্ষতি হবে এমন আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে ডলফিনের মতো স্পর্শকাতর প্রাণীর দাপাদাপি আর হরেক রকম পাখির কিচিরমিচিরই বলে দেয় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে এখন পর্যন্ত সেখানকার ইকোসিস্টেমে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রমানাথ পূজারি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রিন বেল্টের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। এজন্য বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। সেখানে তারা ১ লাখ ৬ হাজার গাছ লাগাবেন। ৬০ হাজার গাছ এরই মধ্যে লাগানো হয়েছে। গত বর্ষাতেও প্রায় ৬০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছিল। এ বছরও বর্ষায় গাছ লাগানো হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ বাকি গাছ লাগানো শেষ হবে। তখন সব মিলে ২ লাখ গাছ লাগানো হবে। ২০১৬ সালের শুরু থেকে যে গ্রিন বেল্ট কার্যক্রম শুরু হয় সেখানে এরই মধ্যে একটি ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছ, ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী প্রকল্প এলাকার চারপাশে বিচরণ করে। আশপাশে গোলপাতা, সুন্দরীর মতো ম্যানগ্রোভ গাছসহ এ এলাকার উপযোগী গাছ লাগানো হয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, গ্রিন বেল্টটি ১৩৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। বন বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী গ্রিন বেল্টের ভিতরে ২ লাখ গাছ লাগানো হচ্ছে। আর গ্রিন বেল্টের বাইরে আরও গাছ লাগিয়ে মোট ৫ লাখ গাছ লাগানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন পাখির মধ্যে প্রকল্পের আশপাশে স্থানীয় পাখি ছাড়াও আছে অতিথি পাখির আনাগোনা। মাছরাঙা, ঘুঘু, কাঠঠোকরা, ময়না, কোকিল এবং বিভিন্ন ধরনের অতিথির পাখির বিচরণ রয়েছে। গ্রিন বেল্টের কারণে প্রকল্প এলাকাতেই আরেকটি বন গজিয়ে উঠছে। বিভিন্ন গাছের মধ্যে ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূল জাতীয় গাছ ছাড়াও আম, নারকেল, কাঁঠাল, আসোকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে। গ্রিন বেল্টটি এখন প্রকল্পের আশপাশের পাখি ও উদ্ভিদ প্রজাতির বেড়ে ওঠা ও বসবাসের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ কার্বন পজিটিভ রাখার জন্য এ গ্রিন বেল্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চারপাশে প্রকল্প এলাকা তথা গ্রিন বেল্টে আরও বেশি পরিমাণে গাছ লাগানো হচ্ছে।
বায়ুম লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিন বেল্ট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো একটি এলাকায় যদি লক্ষাধিক গাছ লাগানো হয় তবে অবশ্যই এর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে এতে সেই এলাকার তাপমাত্রা ও পরিবেশের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা।