সরকার ঘোষিত সময়ানুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ মুহূর্তে রাজনীতির মাঠে কোনো ধরনের অস্থিরতা বা উত্তাপ সৃষ্টি করতে চায় না বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, ইস্যু তৈরি করে একটি মহল দেশ অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এ অবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা ও জনগণের আস্থা অর্জনকেই প্রাধান্য দেবে। পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সরকারকেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামি দল নানা দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচির দিকে বিশেষ নজর রাখবে বিএনপি। বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া রাজপথে কর্মসূচি দেওয়া মানেই গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করা। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশে বিভক্তি ও সংঘাতের শঙ্কা থেকে যায়। বিএনপি সেই পরিস্থিতি চায় না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন।’
বিএনপির দলীয় সূত্র জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচনকে বিএনপিও উৎসবমুখর ও ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায়। বৈঠকে ব্যবসাবাণিজ্য, জনজীবন ও সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার কৌশল নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করে দেশে এসে বিরাট নেতা বনে যাওয়ার ভাব করা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সাক্ষাতের বিষয়েও বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলটি এ বিষয়ে প্রায় ৪০ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন এমন ধারাগুলো সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছে বিএনপি।
একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচন হোক উৎসবমুখর ও ইতিহাসের সেরা নির্বাচন। এজন্য জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।’ সম্প্রতি কয়েকটি ইসলামি দল নানা দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি বলছে, এসব কর্মসূচির দিকে তারা নজর রাখছে, তবে মাঠে নামার কোনো তাড়াহুড়া নেই। নীতিনির্ধারকদের মতে, বিএনপিই সবচেয়ে আগে সংস্কারের কথা বলেছে এবং ঐকমত্য কমিশনের অধিকাংশ প্রস্তাবে তারা একমত।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দুর্গাপূজার নিরাপত্তা, সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের সঙ্গে মিশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে রবি, সোম ও গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে অন্তত সাতটি ইসলামি দল অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সেই কর্মসূচির দিকে নজর রাখছে বিএনপি। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, তাদের দাবির মধ্যে ভোটে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) রয়েছে, যা সম্পর্কে দেশের মানুষ পরিচিতই নন। আর সংস্কারের বিষয়টি সবচেয়ে আগে বিএনপিই বলেছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে আন্তরিক তারা।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, বিএনপি আর উত্তাপ না বাড়িয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে, যাতে দেশে আর কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি না হয়। কারণ দেশে সংকট তৈরি হলে রাজনৈতিক লোকসান বিএনপিরই বেশি হবে। তারা বলছেন, রাজনীতিতে তারা এখন কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে বড় দল হিসেবে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। নির্বাচন পিছিয়ে গেলে দিনদিন সেই সম্ভাবনা কমে আসবে। এ ছাড়া তারা মনে করেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। জাতীয় পার্টিও নানামুখী চাপের মুখে রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নানামুখী তৎপরতা থাকলেও অতীতে তাদের ভোট ৭ শতাংশের বেশি নয়। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের সম্মুখসারিতে ছাত্রসমাজ থাকলেও এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী বিএনপি। তাই তুচ্ছ ঘটনায় বা সংকট সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ হারাতে বিএনপি রাজি নয়। পাশাপাশি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা বা অঘটন ঘটলে তার দায় বিএনপির ওপর যাতে না বর্তায়, সেই লক্ষ্যে দলটি সতর্ক থাকতে চায়।