এখনো অধরা পুরান ঢাকার চাঞ্চল্যকর লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যা মামলার এজাহারের ১১ আসামি। শুধু তা-ই নয়, চাঞ্চল্যকর ফুটেজে থাকা তিন হামলাকারীকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। নীল জামা পরিহিত একজনকে গ্রেপ্তারের দাবি করলেও সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে না পুলিশ। তবে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে অন্তত ৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি ফুটেজ) ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যাচাই করছে পুলিশ। অন্যদিকে গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত সোমবার রাতে র্যাব-১১-এর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নান্নু কাজীকে আজ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসীম উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হামলার ফুটেজে থাকা নীল জামা পরিহিত একজনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি তিনজনের একজন। তবে কী তথ্য তারা দিচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এরই মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি অনুযায়ী চাঁদাবাজি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হতে পারে। আবার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেও তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে তথ্য মিলেছে। আপাতত দুটি কারণকেই আমরা ধারণা করছি। বাইরে থেকেও কেউ কোনো ভূমিকা রেখেছিলো কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাহমুদুল হাসান মহিনের নেতৃত্বে মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মচারী সমিতির অফিসকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মাঝেমধ্যেই সেখানে অনেক ভুক্তভোগীকে নিয়ে মারধর করা হতো। তবে শেখ হাসিনার আমলে হাজী সেলিমের ভাগনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর পাপ্পুর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে এলাকায় ওই সময়ও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন সোহাগ। পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনের সোহানা এন্টারপ্রাইজও নিজের কবজায় নিয়েছিলেন তিনি। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করেন সোহাগ। নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও গত জুন থেকে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন। ৭ জুলাই সর্বশেষ তর্কাতর্কি এবং হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন মহিন ও টিটন। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর বিব্রত হয়ে পড়েন একজন যুবনেতা। সমাধানের উদ্যোগও নেন। তবে কাজ হয়নি। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে এরই মধ্যে সোহাগ হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের তথ্যের পাশাপাশি ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে অন্তত ৫০-৬০টি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও যাচাই করে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তে এখনো অনেক বিষয় জানার আছে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ৯ জুলাই সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত এবং কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। আর পুলিশ করে অস্ত্র মামলা। এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন, টিটন গাজী, মো. আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, তারেক রহমান রবিন, সজীব ব্যাপারী ও মো. রাজিব ব্যাপারী। এদের মধ্যে ১০ জুলাই মহিন ও ১২ জুলাই টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। ১৩ জুলাই আলমগীর ও মনিরের চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। ১৪ জুলাই সজীব ও রাজিবের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।