মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত দেশের রপ্তানি খাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে; যা অন্তর্বর্তী সরকার ও রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। দেশটির এমন সিদ্ধান্ত অবিবেচক হিসেবেই দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য তা পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনায় বসতে যাচ্ছে দুই দেশ। আজ ওয়াশিংটনে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ট্রাম্পের দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠক হতে যাচ্ছে। তবে আলোচনার বিকল্পও ভাবছে বাংলাদেশ। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিষয়টাকে রাজনৈতিক কূটনীতির দিক থেকে বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অতিরিক্ত শুল্কারোপের বিষয়টির সঙ্গে যতটা না ব্যবসায়িক, তার চেয়ে বেশি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যু জড়িত বলে তাঁরা মনে করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সূত্র জানান, সমস্যা সুরাহার জন্য প্রয়োজনে বারবার বৈঠক হবে। দুই দিন আগে থেকেই ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। কথা বলতে প্রস্তুত প্রধান উপদেষ্টাও। আজকের বৈঠকে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না এলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসও আলোচনা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। এত উচ্চমাত্রায় শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত ন্যায্য মনে করে না বাংলাদেশ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও গতকাল সাংবাদিকদের এমন কথাই জানিয়েছেন। আজকের বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন পাল্টা শুল্কের বিষয়টিও উত্থাপন করতে পারেন; যার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানান, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠক আজ হতে যাচ্ছে। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বৈঠকটিতে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, ‘আমরা এখনো আশা করছি এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে। অন্যথায় আমাদের অন্য প্রস্তুতিও রয়েছে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও একই বিষয়ে আলোচনার জন্য এ সময় ইউএসটিআরে অবস্থান করছেন। ইউরোপীয় কমিশনার মারোস সেফচোভিচ ১ জুলাই থেকে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ আরও অনেক দেশের প্রতিনিধি সেখানে রয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও এ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন। বাংলাদেশ গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি পেয়েছে। যেখানে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। আমরা এটি পুনর্বিবেচনার জন্য বলছি। আশা করা যাচ্ছে, বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই আসবে। বিকল্প হিসেবে পাল্টা শুল্কারোপের মতো কিছু করা যায় কি না তা-ও ভাবা হচ্ছে।’
সূত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি কম। দেশটি থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার মধ্য রয়েছে লোহা ও স্টিল, তেলবীজ, তেলজাতীয় ফল, শস্য, বীজ ও ফল, জৈব রাসায়নিক, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, পশুখাদ্য, খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক চুল্লি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, বিমান, জাহাজের কাঠামো, উড পাল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, পারফিউম, প্রসাধনী, হুইস্কি, গাড়ি, বাদাম, ডিম, মধু, সাবান, মোম, পাখির চামড়া ও পালক, মানুষের চুল ইত্যাদি। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে লবণ, সালফার, পাথর, সিমেন্ট, রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, তামাক, বই, খেলনা, অ্যালুমিনিয়াম, সার, কফি, বাদ্যযন্ত্র, সিরামিকের তৈরি পণ্য, জিঙ্ক ও কপার আমদানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্কারোপের কথা ভাবছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ১৪টি দেশের পণ্যে নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘একতরফাভাবে বাংলাদেশের শুল্কছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করা কঠিন হবে। তার চেয়ে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে কী চায়, তা জেনে বাস্তবায়ন করা। আজ যেহেতু বৈঠক হতে যাচ্ছে। সে বৈঠকেও তাদের চাওয়াটা কী এবং সেটা কীভাবে পূরণ করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাাত করা যেতে পারে।’