ঢাকায় সিরিজ বৈঠক করেছে বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধিদল। গতকাল আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দল। তারা জানান, জাতিসংঘের গুম সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অন্যদিকে সরকার বলছে, আগামী এক মাসের মধ্যে গুমবিষয়ক একটি আইন হবে। এ আইনের অধীনে একটি শক্তিশালী গুমবিষয়ক কমিশন গঠন করা হবে।
চার দিনের সফরে গত রবিবার ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ার গ্রাজিনা বারানোস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ। সংস্থাটির কোনো সদস্যের প্রথম বাংলাদেশ সফর এটি। সফরকালে তারা গুম কমিশনের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গুমের শিকার হওয়া পরিবারসহ সরকারের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ১৮ জুন ঢাকা ত্যাগ করবেন গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের দুই সদস্য। গতকাল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান ও ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান গ্রাজিনা বারানোস্কা সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা জাতিসংঘের গুম সনদে স্বাক্ষর করলেও এখনো অনেক চ?্যালেঞ্জ আছে। এ সংকট কাটানোর সব থেকে সহজ ও দ্রুততর উপায় হচ্ছে গুমের শিকার পরিবারগুলোর কথা শোনা। এ সময়ের সুষ্ঠু তদন্তের ওপরও জোর দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, গুমবিষয়ক সনদ স্বাক্ষরের পরে আমরা বাংলাদেশে এসেছি। সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করাই আসল বিষয়। এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে।
ওয়ার্কিং গ্রুপের অন্য সদস্য আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ বলেন, আমরা মূলত একাডেমিক ভিজিটে এসেছি। সরকার, সুশীল সমাজ, গুমের ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধিদল বলপূর্বক গুমসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। বিশেষ করে বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে (আইসিপিপিইডি) বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানান। বৈঠক শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল পরিদর্শন করে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। এরপর তারা সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, গুমবিষয়ক আইনের অধীনে একটি শক্তশালী স্থায়ী গুমবিষয়ক কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান গুম কমিশন যেখানে কাজ শেষ করবে, পরবর্তী কমিশন সেখান থেকে কাজ শুরু করবে। গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠন ও আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়ায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল আমাদের প্রশংসা করেছেন। এ বিষয়ে তারা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গুমবিষয়ক আইনটি আগামী এক মাসের মধ্যে হবে। এ আইন হলে যে কোনো সরকারের জন্য কাউকে গুম করা অনেক রিস্ক ও কষ্টসাধ্য হবে। জুলাইয়ে গণ অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির আগে আরও ভালো কিছু কাজ করা হবে। এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে জামায়াতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং ইউরোপে জামায়াতের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা।
গুম কমিশনের সঙ্গে বৈঠক : জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (ডব্লিউজিইআইডি)-এর প্রতিনিধি দল গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে ডব্লিউজিইআইডির ভাইস চেয়ার গ্রাজিনা করানোস্কা এবং সদস্য আনা লেরেনা ডেলগাদিলো পেরেজের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কমিশনের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।