কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে সংবর্ধনা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। পরে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার বলেছেন, ‘আজ আল্লাহর রহমতে আমিরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি।’ গতকাল শাহবাগ মোড়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ থেকে খালাস পাওয়ার এক দিন পর জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কারামুক্ত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টা ৫ মিনিটে তাঁকে কারামুক্তি দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) তত্ত্বাবধানে শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজহারকে বরণে শাহবাগ মোড়ে একটি সংক্ষিপ্ত সভার আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। এ টি এম আজহার বলেন, ‘প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তৌফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সঙ্গেই থাকব।’ এ টি এম আজহার বলেন, ‘আমি সর্বপ্রথম আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা সত্য যে, এতদিন দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।’ আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন উল্লেখ করে আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা সঠিক তথ্য-উপাত্ত, দলিল ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন, এ মামলায় কোনো ভিত্তি ছিল না। আল্লাহর রহমতে আমি আজ মুক্ত, কিন্তু যাঁরা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তাঁদের আর ফেরানো যাবে না।’
৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই জুলাইয়ের মহাবিপ্লবীদের। যাঁদের রক্ত, ঘাম আর আন্দোলনের ফসল আজকের এ মুক্তি। তাঁদের কারণেই ৫ আগস্ট দেশের জনগণ এক অত্যাচারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে।’
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জালিম সরকারের পতন হয়েছে। আমরা এর মূল ক্রেডিট আল্লাহ তায়ালাকে দিই। আর জমিনের এ ক্রেডিট এ দেশের জনগণকে দেওয়ার পক্ষে। আমরা এক থাকব। জাতির প্রয়োজনে এক পথে হাঁটব এবং জাতির প্রয়োজনে সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব। সবাই ভালো থাকুন।’ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রমুখ। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল মঞ্জুর করে তাঁকে খালাসের রায় দেন।
রায়ে সর্বোচ্চ আদালত ২০১৪ সালে এ টি এম আজহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও মৃত্যুদ বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া আগের রায় বাতিল ঘোষণা করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতেও বলা হয়।
২০১২ সালে ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতের তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাবন্দি ছিলেন।