বাংলাদেশের ৫৫তম মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে গতকাল সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই দলে দলে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদি।
গতকাল ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের বেদিতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম শেষে বিউগলে করুণ সুর তোলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
এর কিছুক্ষণ পর সকাল ৬টা ১১ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছু সময় নীরবতা পালন করেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকশ দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। প্রধান উপদেষ্টার পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর একে একে বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকীতে বৈষম্যমুক্ত বিভাজনহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ঝরেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের কণ্ঠে। ২৩ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এবার এমন এক সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন হচ্ছে, যখন চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পথ ধরে তরুণ প্রজন্ম বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকা পুরাতন বিমান বন্দর (তেজগাঁও) এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে। সকাল ৮টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানসহ দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল পৌনে ৯টায় তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যরা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।