‘মৌমাছি মৌমাছি/কোথা যাও নাচি নাচি/দাঁড়াও না একবার ভাই...’ শৈশবে ছন্দে ছন্দে এ ছড়াটি পড়েনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক সময় গাছের ডালে, দালানের ছাদের নিচে বা ভেন্টিলেটরে, বন-জঙ্গলে, গাছের কোঠরে দেখা যেত মৌমাছির বাসা। মৌচাকে ঢিল ছুড়ে দৌড়ে পালিয়ে যেত দুষ্টু ছেলের দল। এমন দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। মৌমাছি কেবল বইয়ের পাতায় রয়েছে, দৃশ্যত এ ক্ষুদ্র প্রাণীটিকে সচরাচর দেখা যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফুলের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তনে ফুল ফোটার সময় পরিবর্তন, গাছপালা কেটে ফেলা ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার মৌমাছি কমে যাওয়ার বড় কারণ।
কৃষি গবেষকদের মতে, মৌমাছি না থাকলে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদনে বড় ধাক্কা লাগবে। কারণ, শুধু মধু বা মোম উৎপাদনেই নয়, ফুল থেকে ফুলে ঘুরে ঘুরে পরাগায়ণের মাধ্যমে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ক্ষুদ্র পতঙ্গটি। মধু উৎপাদনকারী মৌমাছি প্রতিবছর প্রায় ৩২ লাখ কোটি টাকার ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে। আর এই ফসলগুলো খেয়ে বেঁচে আছে পৃথিবীর ৯০ শতাংশ প্রাণী। পরাগায়ণে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জাতভেদে মৌমাছির বাসা থেকে ৩০০ গ্রাম থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে থাকে মোম। পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরা মধুর চাহিদা বিশ্বব্যাপী। তবে বর্তমানে কৃত্রিম উপায়ে চাষের মধু ছাড়া প্রাকৃতিক মধুর জোগান নেই বললে চলে। একমাত্র সুন্দরবন কিছু প্রাকৃতিক মধুর জোগান দিয়ে যাচ্ছে। মৌয়ালরা বলছেন, সুন্দরবনেও মৌচাক কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে অদক্ষ হাতে মৌচাক কেটে রানী মৌমাছির ক্ষতি করা, অসময়ে চাক কেটে ফেলা, লোভের কারণে পুরো চাক কেটে নেওয়ায় কমছে মৌমাছি।
পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে প্রতিবছর ২০ মে পালিত হয় বিশ্ব মৌমাছি দিবস। বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে র্যালি, সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। এবার দিবসটি উপলক্ষে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ফুলের জোগান কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক গাছে নির্দিষ্ট সময়ে ফুল ফুটছে না। এতে মৌমাছির খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া থাইয়োমিথাক্সন জাতীয় কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে মৌমাছির কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি মৌমাছি বাড়াতে রাস্তার পাশ ও খালি জায়গায় ফুলযুক্ত ফলদ গাছ রোপণের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সারা বছর ফুল ফোটে এমন গাছ লাগানো ও দিনের পরিবর্তে বিকাল বা সন্ধ্যায় কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে উন্নত জাতের রানী মৌমাছি আমদানির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।