ব্যাংকে যে অর্থ জমা থাকে, সেটি জনগণের টাকা। সাধারণ মানুষ যে অর্থ সঞ্চয় রাখে, ব্যাংক তা ঋণ হিসেবে দেয় বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। ব্যাংকের দেওয়া ঋণ কুঋণে পরিণত হলে অর্থাৎ সে অর্থ ফেরত না এলে জনগণের অর্থই আত্মসাৎ হয়। গত ৫৪ বছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ না করা বা সোজা কথায় আত্মসাতের ঘটনা অহরহ ঘটেছে। ব্যাংকে কর্মচারী-কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে লুটেরারা বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এমন নজির কম নয়। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় দিক। কিন্তু সবাইকে তাজ্জব করে ছয় মাসে অর্থাৎ গত জুলাই-ডিসেম্বর দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেছেন, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ৬১ তফসিলি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, একদিকে ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণ বা নবায়ন কমেছে, অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ কিছু গ্রাহকের বড় অঙ্কের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকৃত করেছে। ঋণ শ্রেণীকরণের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশসংক্রান্ত রিট ভ্যাকেট হয়েছে। পুনঃ তফসিলি ঋণের কিস্তি পরিশোধ না হওয়ায় পুনরায় শ্রেণীকৃত হয়েছে। মাত্র ছয় মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিশালাকারে বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসাবাণিজ্যের মন্দাবস্থা যে দায়ী, তা স্পষ্ট। কলকারখানায় নিরাপত্তাহীন ব্যবস্থা বিরাজ করায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ডলারসংকট, জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতির কারণেও সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। যেসব ব্যবসায়ী কখনো ঋণ খেলাপের লজ্জায় পড়েননি তাঁরাও পড়েছেন মন্দাদশায়। এ প্রেক্ষাপটে সরকারকে মূল সমস্যায় হাত দিতে হবে জরুরিভাবে।