পটুয়াখালীর ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগে টেন্ডার বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অপারেটর আরপিসিএল-নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) কে যত দ্রুত সম্ভব নতুন দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, ভবিষ্যতে কয়লা সরবরাহের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে দুই বছর করার পরামর্শও দিয়েছে বিভাগটি। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৭ আগস্ট জারি করা আদেশটি একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসেছে, যেখানে দরপত্র প্রক্রিয়ার কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নে একাধিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ‘২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আহ্বান করা দরপত্রে কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নে অসঙ্গতি থাকায় প্রক্রিয়াটি বাতিল করা জরুরি।’ এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান, আরএনপিএল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ সচিবের দপ্তরে।
বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিযোগিতাহীনভাবে কয়লা সরবরাহকারী নিয়োগ দিলে সরবরাহের খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত বিদ্যুতের দামে প্রভাব ফেলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছোট সময়ের চুক্তি ছোট সরবরাহকারীদের অংশগ্রহণে উৎসাহ দেয়, যেখানে পাঁচ বছরের চুক্তি কঠোর আর্থিক ও কারিগরি শর্ত আরোপ করে।’
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইয়ংটাই এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেডকে ঘিরেই মূলত প্রশ্ন ওঠে। তদন্তে দেখা যায়, দরপত্রের প্রযুক্তিগত শর্তাবলি ও সময়সীমা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল যা একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিত। ২০২৫ সালের ১১ জুলাই, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড–এ ‘কীভাবে টেন্ডারের নিয়ম এবং একজন একক দরদাতা ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে আটকে দেয়’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তদন্ত শুরু হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, কয়লার ক্যালোরিফিক মান, নির্দিষ্ট খনির উৎস এবং সরবরাহ প্রতিশ্রুতি এমনভাবে নির্ধারিত ছিল যা ইয়ংটাইকে বাড়তি সুবিধা দিতে থাকে।
জানুয়ারী ২০২৪ থেকে আরএনপিএল তিনবার কয়লা সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করে। প্রতিবারই ইয়ংটাই এনার্জি একমাত্র যোগ্য দরদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়, যার দর ছিল ৫০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এমনকি পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য আহ্বান করা ১ মিলিয়ন টন কয়লার টেন্ডারেও ইয়ংটাইই একমাত্র যোগ্য প্রতিষ্ঠান হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ তার চিঠিতে উল্লেখ করে, ভবিষ্যতের দরপত্র প্রক্রিয়া অবশ্যই ‘ন্যায্য, সীমিত প্রবেশাধিকার মুক্ত, নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক’ হতে হবে, যাতে কোনও নির্দিষ্ট সরবরাহকারী সুবিধা না পায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত দেশের অন্যতম বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ।’
এদিকে, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ইয়ংটাই এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জু বিনকে ফোন করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন এবং কলটি কেটে দেন। সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।