যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ বা ‘যুদ্ধ বিভাগ’ করার উদ্যোগ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মন্ত্রণালয়ের নতুন নামটি দ্বিতীয় বা গৌণ নাম হিসেবে ব্যবহারের জন্য শুক্রবার তিনি একটি নির্বাহী আদেশে সই করবেন। একইসাথে এতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে সেক্রেটারি অব ওয়ার বা যুদ্ধমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত করার নির্দেশ থাকবে।
অবশ্য এককালে এর নামে যুদ্ধ দফতরই ছিল। বর্তমানে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা পেন্টাগন সেটিরই উত্তরসূরি। ১৭৮৯ সালে এটি প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ-স্তরের সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা টিকে ছিল ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। নির্বাহী বিভাগ গঠনের দায়িত্ব কংগ্রেসের ওপর ন্যস্ত, যার মানে দাঁড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নাম আইনগতভাবে পরিবর্তন করতে হলে সংশোধনীর প্রয়োজন হবে।
আদেশে লেখাটি হয়েছে, প্রতিরক্ষা দফতরের তুলনায় যুদ্ধ দফতর নামটি প্রস্তুতি ও দৃঢ় সংকল্পের শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যা কেবল প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতার ওপর জোর দেয়। ‘শক্তি ও সংকল্প প্রদর্শনের’ প্রচেষ্টা থেকে আদেশে ডিফেন্স সেক্রেটারি বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী, তার মন্ত্রণালয় ও অধস্তন কর্মকর্তাদের নতুন উপাধিগুলো দ্বিতীয় নাম হিসেবে ব্যবহার করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে নাম পরিবর্তন করতে পারবেন না, তাই আদেশে আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী পদক্ষেপের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করতে হেগসেথকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে মন্ত্রণালয়ের নাম স্থায়ীভাবে পরিবর্তনের দিকে এগোনো যায়।
জর্জ ওয়াশিংটনের উদ্যোগে যুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুনরায় ব্র্যান্ডিং করে একে নতুন নাম দেওয়া হয়। নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, নতুন নামকরণ করা হলে- এই মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি আরও তীক্ষ্ণ হবে এবং শত্রুপক্ষের কাছে বার্তা যাবে যে আমেরিকা তার স্বার্থ রক্ষায় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।
স্থায়ীভাবে নাম পরিবর্তনের খরচ কত হবে তা এখনো হোয়াইট হাউস জানায়নি। তবে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ধারণা করছে, শত শত সংস্থা, প্রতীক, ইমেইল ঠিকানা, ইউনিফর্ম এবং আরও নানা বিষয়ে পরিবর্তন আনতে খরচ বিলিয়ন ডলারের ঘরে চলে যাবে।
এতে পেন্টাগনের ব্যয় ও অপচয় কমানোর প্রচেষ্টা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। নাম পরিবর্তনের কথা ট্রাম্প বারবার উত্থাপন করেছেন। যুক্তি দিয়ে বলেছেন, আগের নাম ব্যবহারের সময় যুক্তরাষ্ট্র ‘দুই বিশ্বযুদ্ধেই অবিশ্বাস্য বিজয়ের ইতিহাস’ রচনা করেছে।
আইনপ্রণেতারা এ ধরনের পরিবর্তনকে সমর্থন করবেন বলেও তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, প্রয়োজন হলে কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমারতো মনে হয় সেটারও দরকার নেই। তবে যদি প্রয়োজন হয়, আমি নিশ্চিত কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে থাকবে।’
মন্ত্রণালয়কে ‘যুদ্ধ পরিচালনা’ এবং ‘যোদ্ধার নীতি’-তে পুনরায় মনোযোগী করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প ও হেগসেথ। তাদের যুক্তি হলো, মন্ত্রণালয় বৈচিত্র্য, ন্যায়সঙ্গত সুযোগ ও অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি এবং ‘য়ৌক মতাদর্শে’ (সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি সচেতন হয়ে ওঠা) অতিরিক্ত মনোযোগ দিচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির আলোচনা হালকাভাবে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। ‘আমি যা করতে পারি তা হলো যুদ্ধ বন্ধ করা,’ বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে বলেন তিনি। ‘আমি মনোযোগ চাই না। আমি কেবল জীবন বাঁচাতে চাই।’
নাম পরিবর্তন ট্রাম্পের দাপ্তরিক দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাক্ষরিত ২০০তম নির্বাহী আদেশ হবে। যদিও মন্ত্রণালয়ের পুরোনো নাম ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল।
তবে এটি এমন এক সময়ে আসলো যখন চীনের বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের পরপরই, নতুন অস্ত্র, ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম উন্মোচন করা হয়েছে— যা অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে দেখছেন।
বিডি-প্রতিদিন/শআ