পঞ্চগড়ের বিভিন্ন নদ-নদীতে ক্ষতিকর গ্যাস ট্যাবলেট বা রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে এবং নদী পাড়ের মানুষ। এতে মাছসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে হাট-বাজারে। বিষাক্ত জীবাণু আক্রান্ত এসব মাছের ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে।
পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫০টি নদ-নদী। এসব নদ-নদীতে রয়েছে নানা প্রজাতির দেশী মাছ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, নদীতে পানি না থাকা এবং নদ-নদীতে বোরো ধানের আবাদের কারণে অনেক নদীতে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তের পথে। এসব নদ-নদীর মাছ মূলত এ অঞ্চলের মানুষের আমিষের চাহিদা মিটাতে বিরাট ভূমিকা রাখে। মাছ ধরেই জেলায় প্রায় ৫ সহস্রাধিক জেলে জীবীকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব নদী থেকে পয়া, গচি, মাগুর, শিং, শোল, বৈরালী, চিতল, চিলি, পুুঁটি, শাটিসহ আরও বিভিন্ন প্রকার মাছ পাওয়া যায়। অনন্য স্বাদের এসব মাছ হাট-বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। করোতোয়া, মহানন্দা, ডাহুক, চাওয়াই, তালমা, পাথরাজ হচ্ছে এই জেলার সবচেয়ে বড় নদী। এসব নদীতে সারা বছর দেশী মাছ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এসব নদীতে রাতের অন্ধকারে গ্যাস ট্যাবলেট বা বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করা হয়। জেলে এবং স্থানীয় অসাধুরা এভাবে মাছ শিকার করছেন। অনেকে বলছেন, জেলেরা রাতের বেলা প্রান্তিক এলাকায় গিয়ে নদীর একটি বিশেষ স্থানে পানিতে গ্যাস ট্যাবলেট অথবা বিষ মিশিয়ে দেয়। ১ থেকে দুই ঘণ্টা পর মাছেরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক মাছ মারাও যায়। মাছেরা অসুস্থ হয়ে পানিতে ভেসে বেড়ায়। এসময় জাল দিয়ে অসুস্থ এবং মৃত মাছগুলোকে তুলে আনেন তারা। এই বিষ বা গ্যাস ট্যাবলেট কয়েক কিলোমিটার জুড়ে নদ নদীর পানিতে মিশে যায়। নদীর মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোর আশপাশেই বেশি বিষ প্রয়োগ করা হয়।
স্থানীয় সচেতন মহল এবং পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, বিষ প্রয়োগে নদ-নদীতে মাছ শিকারের ফলে এর নানা ধরনের খারাপ প্রভাব পড়ছে। নদ-নদীর মাছসহ জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এসব মাছ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে স্থানীয় জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীরা। বিষ আক্রান্ত এসব মাছ খেলে স্বাস্থ্যগত সমস্যার আশঙ্কাও করছেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাঁটা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, রাতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে জেলেরা। পরদিন তারা সকালে বিকালে স্থানীয় হাট বাজারে এসব মাছ বিক্রি করেন। আমি বেশ কয়েকজন জেলেকে এ ব্যাপারে সাবধানও করেছি। কিন্তু তারা কারও কথা শোনে না।
প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা কারিগরের পরিচালক মোস্তাক আহমেদ জানান, আমি নিজে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরতে দেখে জেলেদের সাবধান করেছি। ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছি। আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তারপরও অবৈধভাবে মাছ শিকার থামেনি। এ বিষয়ে জেলে এবং নদী পাড়ের মানুষদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কে এম হালিম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। উপজেলা মৎস্য অফিসে বিষয়টি জানানো হয়েছে। জেলেদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই