জামালপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে দুই ঘণ্টা দেরিতে উপস্থিত হওয়ায় এবং আহতদের অবহেলার অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন আহতরা। এ সময় ক্ষমা না চাইলে জেলা প্রশাসকের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।
বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন আহতরা। পরে তাদের ডেকে দুঃখ প্রকাশ করে আহতদের মাঝে চেক বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে, ৬৭ জন আহতের মাঝে চেক বিতরণের কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের দুইজন গ্যাজেটভুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠায় ৬৫ জনের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জামালপুর জেলার আহত ‘সি’ ক্যাটাগরির ৬৭ জন জুলাই যোদ্ধাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার অনুদানের চেক বিতরণের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহতদের মাঝে এই চেক বিতরণের কথা ছিল। তাই অধিকাংশ আহতরা নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেও অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ায় এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ কোনো খোঁজ না নেওয়ায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা ক্ষুব্দ হয়ে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কর্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে জেলা প্রশাসক আহতদের ডেকে দুঃখ প্রকাশ করলে তারা বিক্ষোভ বন্ধ করে সম্মেলন কক্ষে গিয়ে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।
চেক নিতে আসা আহতরা অভিযোগ করেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চলে আসি এবং দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। এ সময়ের মধ্যে ডিসি বা প্রশাসকের কোনো প্রতিনিধি আমাদের সাথে দেখা পর্যন্ত করেনি। আমাদের অবহেলা করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা বসে থাকলেও আমাদের এক বোতল পানিও দেওয়া হয়নি। এজন্য আমরা সভাকক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষোভ করেছি।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করেন। সারাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের সম্মান করা হলেও এই জেলা প্রশাসক তা করেন না। তাই ক্ষমা না চাইলে জেলা প্রশাসককে পদত্যাগ করতে হবে। পরে জেলা প্রশাসক আহতদের ডেকে দুঃখ প্রকাশ করলে আহতরা বিক্ষোভ বন্ধ করে সম্মেলন কক্ষে ফিরে আসেন এবং চেক গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম জানান, আজ আটজন অফিসার নেই। এডিসিরাও প্রশিক্ষণে আছে। দুই-একজন অন্য উপজেলায়। তিন দিনব্যাপী জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা উদ্বোধনের জন্য গিয়েছিলাম সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে প্রধান অতিথি থাকায় সবার পরে বক্তব্য দিতে হয়েছে। মেলার প্রকল্প দেখার জন্য তারা আমাকে ইনভাইট করেছিল। আরও দুইটি উপজেলার প্রকল্প না দেখে উনাদের কথা চিন্তা করে তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। মূলত এটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। একইদিনে দুইটি প্রোগ্রাম পড়ে যাওয়ায় ও কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় এটি হয়েছে।
এদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জামালপুরের আহত ‘সি’ ক্যাটাগরির গ্যাজেটভুক্ত ৬৭ জনকে এক লাখ টাকা করে মোট ৬৭ লাখ টাকার চেক বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু ওই ৬৭ জনের মধ্যে গ্যাজেটভুক্ত ৭ নম্বর ক্রমিকের লাবলু আনছারীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দোসরের অভিযোগ তোলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। এ সময় অভিযুক্ত দুইজন অনুপস্থিত থাকায় তাদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়নি এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার দাবি তোলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই